১৪ নভেম্বর ২০১৬ সোমবার, ০৪:৫৫ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় এক মাসে প্রেম ও পরকীয়ার টানে ১০০ নারী প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছেড়েছে। এসব ঘটনায় থানায় ১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, হাজীগঞ্জ উপজেলাটি ভৌগোলিকভাবে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় সেখানে বসবাসের জন্য ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের পছন্দের শহর হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এতে সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক-বীমার সুব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য জেলার কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব, ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর এলাকার লোকজন ইতিমধ্যে এ শহরটিতে বসবাস গড়ে তুলেছে। এজন্য প্রয়োজন দেখা দিয়েছে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার আবাসস্থলের।
ভাড়াটিয়া হিসেবে যারা অবস্থান করছেন তাদের অধিকাংশই হচ্ছেন প্রবাসীর স্ত্রী। এসব প্রবাসীর স্ত্রীদের স্বামীর অবর্তমানে সংসার সামলাতে ছুটতে হচ্ছে স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সন্ধানে। যোগাযোগ করতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তির সঙ্গে।
এতে প্রথমে পরিচয়, তারপর কথাবার্তা, মুঠোফোনের নাম্বার বিনিময়, একসময় সখ্য থেকে গভীর প্রেম। আর এ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে ফেসবুক, ইমু, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো আধুনিক প্রযুক্তি। যা থেকে যাচ্ছে পরিবারের অন্যদের অজানা। আর এতেই বিপত্তি ঘটছে অনেকের জীবনে। সংসার ভাঙার এ তালিকায় গৃহবধূর পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাও রয়েছে। যারা ইতিমধ্যে সংসার ছেড়েছে তাদের সংখ্যা শতাধিক হওয়া সত্ত্বেও থানায় অভিযোগ এসেছে মাত্র ১৫টি। আর বাকি পরকীয়া ও প্রেমের কারণে ঘরছাড়ার অভিযোগ রয়েছে তিমির আঁধারে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘর ছেড়ে পরকীয়ার টানে যাওয়া নারীরা হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলার হুটনী গ্রামের আলুরা বেগম (৪০), সোনাইমুড়ি গ্রামের নারগিস বেগম (২২), পৌর এলাকার মকিমাবাদ মহল্লার নাছরিন বেগম (৪০), ব্রাক্ষ্মণছোঁয়া গ্রামের শাহীনুর বেগম (২৪), স্বর্ণা গ্রামের জোসনা বেগম (২৮), খাটরা বিলওয়াই গ্রামের খাদিজা বেগম (২১), ধড্ডা গ্রামের তাহমিনা বেগম (২০), হাড়িয়াই গ্রামের হাওয়া বেগম (২৬), একই দিন রান্ধুনিমুড়া গ্রামের জেসমিন বেগম (২৬)।
এদিকে প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছে পাতানিশ গ্রামের স্কুলছাত্রী আমেনা আক্তার (১৫), কাইজাঙ্গা গ্রামের স্কুলছাত্রী সুমি আক্তার (১৫), টোরাগড় গ্রামের স্কুলছাত্রী সানজিদা আক্তার (১৪), বলিয়া গ্রামের রুমা আক্তার (১৮)। তবে রুমাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।–মানবজমিন।
এ পরকীয়ার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে জানা যায়, পরকীয়ায় আসক্ত নারীদের চলে যাওয়া বেশিরভাগ প্রেমিকের সঙ্গে রয়েছে অসম প্রেম। অনেক ক্ষেত্রে ওই চলে যাওয়া নারীদের বয়সের চেয়ে প্রেমিক পুরুষের বয়স কম। তারপরও অনেকে বিত্তহীন বিভিন্ন পেশার পুরুষ ব্যক্তিকে প্রেমিক হিসেবে পছন্দ করে ঘর ভাঙছে এসব নারী। চলে যাওয়ার সময় তারা স্বামীর রক্ষিত অর্থ, স্বর্ণালংকার ও ভূমির প্রয়োজনীয় দলিলাদি নিয়ে যায়। আর স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা বাপের বাড়ির অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ মনের আবেগকে পুঁজি করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছে। আর এসব অসম প্রেম ও অসামঞ্জস্য সম্পর্কের মোহ কেটে গেলেই নেমে আসে চরম ভোগান্তি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, আইনের মাধ্যমে এ সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা, স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক, ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করা। এছাড়া যতটুকু সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তি থেকে নারীদের দূরে রাখা।
চাঁদপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিন জানায়, এটি একটি সামাজিক অবক্ষয়। হাজীগঞ্জের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমের সাহায্যে জেনেছি। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।