
চলমান মন্দাভাব কাটিয়ে ২০১৬ সালের প্রথমার্ধেই ইতিবাচক ধারায় ফেরে দেশের শেয়ারবাজার। সেকেন্ডারি বাজারে বিদেশী ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়লেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে আগের বছর কোনো রাইট শেয়ার ইস্যু না হলেও চলতি বছর এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে তিনটি কোম্পানি।
জানা গেছে, আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে পাবলিক ইস্যু রুলস (মূলত বুক বিল্ডিং পদ্ধতি) সংশোধনের ফলে বাজারে নতুন শেয়ারের চাহিদা থাকলেও ২০১৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর অর্থ সংগ্রহ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আগের সব আইপিও আবেদন বাতিল হয়ে যায়। সংশোধিত বিধির আলোকে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে আবেদন করতে বলায় বাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আপাত একটি বিরতি দেখা যায়।
তবে শেষ পর্যন্ত নতুন ও পুরনো আইনের আওতায় বাজারে ১১টি নতুন সিকিউরিটিজ আসে। অন্যদিকে বাজারের পরিবর্তিত সেন্টিমেন্টের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও কিছুটা ধীরগতি অবলম্বন করেছে অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে আইপিও, রাইট ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার ৭২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ১৪০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে ১১টি সিকিউরিটিজ থেকে ৮৯৩ কোটি টাকা, রাইট ইস্যুর মাধ্যমে ৩টি কোম্পানি ৩৬৫ কোটি ৮ লাখ ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১২৬টি কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ইস্যুয়ার।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে কোনো রাইট শেয়ার ইস্যু না হলেও আইপিও ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার ৮০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ১৬০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে আইপিওতে ১২টি সিকিউরিটিজ ৮৩০ কোটি ৭০ লাখ ও বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৪৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল।
২০১৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ড্রাগন সোয়েটার ৪০ কোটি টাকা, ডরিন পাওয়ার জেনারেশন ৮০ কোটি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ৪৪ কোটি ২৫ লাখ, এভিন্স টেক্সটাইল ১২০ কোটি, একমি ল্যাবরেটরিজ ২১১ কোটি ৬০ লাখ, ইয়াকিন পলিমার ২০ কোটি, ফরচুন সুজ ৯৭ কোটি, প্যাসিফিক ডেনিমস ৭৫ কোটি, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড ২০০ কোটি, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ১০ কোটি ও এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
এদিকে আইপির সংখ্যা কমার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ। ২০১৬ সালে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১২৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ১৫টি, আর্থিক খাতের নয়টি, প্রকৌশল খাতের ১৬টি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের সাতটি, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের ছয়টি, টেক্সটাইল খাতের ২১টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৪টি, সেবা ও আবাসন খাতের চারটি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চারটি, সিরামিক খাতের একটি, বীমা খাতের ২৩টি ও বিবিধ খাতের ছয়টি মূলধন বৃদ্ধি করে। যদিও ২০১৫ সালে এ খাতের ১৪৬টি কোম্পানি বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে চলতি বছর রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৩৬৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে তিনটি কোম্পানি। এর মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাত ২৬২ কোটি টাকা, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ৫১ কোটি ৬২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে কোনো রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়নি কোনো কোম্পানি।
শেয়ার বিজনেস24.কম