১৮ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার, ০৩:০১ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
বীমা খাতে গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভেটিং শেষে তা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের শুরুতে বিধিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে।
২০১০ সালের বীমা আইনের ১৫৬ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ‘গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জীবন বীমা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নির্ধারিত হারে অর্থ আদায় করে তা এ তহবিলে জমা করা হবে।
এ তহবিলের ব্যবহার সম্পর্কে (২) উপধারায় আরো বলা হয়েছে, তহবিলে জমাকৃত অর্থ জীবন বীমা গ্রাহকদের সাধারণ নিরাপত্তার জন্য এবং প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য উদ্দেশে ব্যবহূত হবে। একইভাবে এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ প্রসঙ্গে (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, তহবিলে রক্ষিত অর্থ দক্ষভাবে বিনিয়োগ করা হবে, যাতে সর্বোচ্চ আয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের নিরাপত্তাও গুরুত্ব পায়।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. সাঈদ কুতুব বলেন, আমরা গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল বিধিমালাটি চূড়ান্ত করেছি। এখন শুধু তা গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষা। বীমায় গ্রাহকস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময় শঙ্কার কারণ ঘটে। এ বিষয়ে আইডিআরএও একাধিকবার শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বীমাগ্রহীতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান বলেন, নতুন এ আইন অনুযায়ী বীমা খাতের প্রতিটি কোম্পানির একটি নিজস্ব ফান্ড থাকবে, যেখানে মোট প্রিমিয়ামের ওপর নির্ধারিত হারে অর্থ জমা করবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এতে কোনো কারণে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলেও কিছু অর্থ পাবেন এর গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা।
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়েই বড় হচ্ছে দেশের জীবন বীমা খাত। তীব্র প্রতিযোগিতার এ বাজারে একের পর এক নতুন কোম্পানির অনুমোদন পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলছে। কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও অধিকাংশ কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি শক্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নতুন অনেক কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পুরনো অনেক দুর্বল কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় গ্রাহক সুরক্ষা তহবিল গঠন করা হলে তা অবশ্যই বীমা খাতের জন্য ইতিবাচক হবে।
জানা গেছে, দুর্বল আর্থিক ভিত্তির কারণে বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও পুরনো ১১টি কোম্পানি এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ নানা কারণে এসব কোম্পানির বীমাগ্রহীতা, শেয়ারহোল্ডার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোম্পানিগুলো হলো— মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, ইউনিয়ন, ইসলামী কমার্শিয়াল, দেশ জেনারেল, ক্রিস্টাল, সাউথ এশিয়া ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। তালিকাভুক্তির জন্য পরিশোধিত মূলধন বা টানা মুনাফার শর্ত পূরণে ব্যর্থ পুরনো এসব কোম্পানিকে এখন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
এছাড়া আর্থিক দুর্বলতার পাশাপাশি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শুধু বাধ্যবাধকতার কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে বেশকিছু বীমা কোম্পানি। এ তালিকায় পদ্মা লাইফ ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স অন্যতম। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময় এসব কোম্পানির নানা অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে বিধিবহির্ভূতভাবে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি, আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হারে বিনিয়োগ না করা, অননুমোদিত খাতে বিনিয়োগ, আইডিআরএর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যপদ ক্রয়, নির্ধারিত হারের কম প্রিমিয়াম নেয়া ও রাজস্ব ফাঁকি অন্যতম। অনিয়মে জর্জরিত গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।