facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২২ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৪

Walton

অর্থনীতি বাড়লেও পিছিয়ে পড়ছে শেয়ারবাজার


১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রবিবার, ০২:৪৭  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


অর্থনীতি বাড়লেও পিছিয়ে পড়ছে শেয়ারবাজার

দেশের অর্থনীতি বছর বছর বড় হচ্ছে। কিন্তু সেই হারে শেয়ারবাজার (বাজার মূলধন) বড় হচ্ছে না। অর্থনীতির তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে শেয়ারবাজার। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির (জিডিপি) মাত্র ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ হলো বাজার মূলধন (মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিও)। অথচ বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাজার মূলধন দেশগুলোর অর্থনীতির প্রায় ৭১ শতাংশ (গড়ে)।
 
অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণাই এর বড় কারণ। পুঁজিবাজারকে এখনও অনেকেই ফটকা বাজার বা কারসাজির বাজার বলেই মনে করেন। ফলে অর্থনীতি বাড়তে থাকলেও সে তুলনায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়েনি পুঁজিবাজারে। তাছাড়া বাজারে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তীব্র অভাব রয়েছে। যে কোম্পানিগুলো বর্তমানে তালিকাভুক্ত রয়েছে তার বেশিরভাগই ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে না। অল্প কয়েকটি কোম্পানি ভালো মানের। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কম। এতে দেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ভালো হতে থাকলেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না পুঁজিবাজারে।
 
প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, আমাদের অর্থনীতি প্রায় ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু সেই হারে পুঁজিবাজার বাড়ছে না। এর বড় কারণ হলো : বাজারে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির অভাব। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ড. আবু আহমেদ বলেন, যদি ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে থাকে তখন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে আসতে থাকবে। ফলে বাজার মূলধন বাড়তে থাকবে। বর্তমানে আমাদের দেশে অল্পকিছু কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ফলে অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করতে চান না। পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে হলে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।
 
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারের দিকে মানুষের আগ্রহ যে বাড়বে এর বড় উদারহরণ হলো গ্রামীণফোন। ২০০৯ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সে সময় গ্রামীণফোনের শেয়ার পাওয়ার জন্য অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে অংশগ্রহণ করেন। যার প্রভাব পড়েছিল গোটা পুঁজিবাজারেই। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী,  ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ছয় দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছয় দশমিক শূন্য এক শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছয় দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাত্ ২০১০ সাল থেকেই দেশের অর্থনীতি বর্ধিত হারে বাড়ছে। অথচ ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী সেই হারে বাড়ছে না পুঁজিবাজারের পরিধি। ২০১০ সাল শেষে অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন ছিল ৩৭ শতাংশ। ২০১১ সাল শেষে তা হয় ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এরপর ২০১২ সালে ২৬ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, ২০১৪ সালে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ২০১৫ সাল শেষে তা হয় ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের নভেম্বর শেষে জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশে। টাকার অংকে বাজার মূলধনের পরিমাণ ৩ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অথচ এ বন্ডগুলো তালিকাভুক্তির পর আর কোনো লেনদেন হয়নি। তাই বন্ডের অংশ বাদ দিলে বাজার মূলধন হবে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এটি বিবেচনায় নিলে অর্থনীতিতে বাজার মূলধনের অংশ আরও কমে আসবে।
 
বাংলাদেশে অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজারের অংশ ২০ শতাংশের কম কিন্তু বিশ্বব্যাপী এ হার অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ভারতের অর্থনীতির তুলনায় দেশটির পুঁজিবাজারের অংশ ৭৩ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় ৪১ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১২৯ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৮২ শতাংশ, শ্রীলংকায় ২৬ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৮৮ শতাংশ।
 
অর্থনীতির তুলনায় শেয়ারবাজার পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালের দিকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি ছিল। তখন বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি ও দাম বাড়ার ফলে বাজার মূলধনও বেশি ছিল। কিন্তু এরপর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। ফলে শেয়ারবাজারের সূচক কমার সাথে সাথে বাজার মূলধনও কমে গেছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় আমাদের বাজার মূলধন (জিডিপির ভিত্তিতে) অনেক কম। এ অবস্থায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সেজন্য ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসতে হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: