১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সোমবার, ১১:৩৬ এএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পচিালকদের বাধ্যতামূলক শেয়ার ধারণের শর্ত শিথিল করছে সরকার। শর্ত শিথিলে দেওয়া কমিশনের প্রস্তাবটি চলতি বছরের জুন মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে শেয়ার ধারণ নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে কয়েকটি রিট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। শেয়ারবাজারে আস্থা, সুস্থ্য পরিবেশ এবং লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থমন্ত্রণালয় বিএসইসির পাঠানো প্রস্তাব আমলে নিয়েছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের শর্ত সংস্কার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের গতি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬ হাজার কোটি টাকা সহজশর্তে বিশেষ ঋণ প্রদানের কথাও ভাবছে সরকার। বিএমবিএর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসইসি ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মতামত চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি প্রদান সম্পর্কে এমন তথ্য জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
শেয়ারধারণে পরিশোধিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালকদের এককভাবে ন্যূনতম শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ এবং সম্মিলিত শেয়ার ধারণের শর্ত ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এ প্রস্তাব বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন যাই হোক না কেন, প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ব্যতীত) ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত রয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর তা ঠেকাতে ২০১১ সালের নভেম্বরে পুনর্গঠিত কমিশন এ শর্ত আরোপ করেছিল।
শর্ত পরিপালন করতে না পারায় অনেকে কোম্পানির পরিচালক পদ ছাড়তে বাধ্য হন। কয়েকটি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির পরিচালকরা বিএসইসির এ সংক্রান্ত নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তবে আইনি লড়াইয়ে তারা হেরে যান। অবশ্য সে সময়কার কয়েকটি মামলা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন প্রস্তাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে চারটি ধাপ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা হলে পরিচালকদের এককভাবে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।
নির্দেশনাটি নতুন করে সংশোধনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কোম্পানি খাতের প্রায় সব কোম্পানিসহ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ ও রসায়ন, টেলিযোগাযোগ খাতের কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তারা এর সুবিধা পাবেন।
ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ২৯২ কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি বা তার কম এমন কোম্পানি সংখ্যা ২৩১টি। ২০০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম এমন কোম্পানির সংখ্যা ২৭টি। ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি কিন্তু ১ হাজার কোটি টাকার কম কোম্পানির সংখ্যা ২৮টি এবং ১ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনবিশিষ্ট কোম্পানির সংখ্যা ৭টি।
পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার কম হলে পরিচালকদের এককভাবে শেয়ার ধারণ করতে হবে কমপক্ষে দেড় শতাংশ এবং উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ।
কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি কিন্তু ১ হাজার কোটি টাকার কম হলে পরিচালকদের ১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণ ১৫ শতাংশ বজায় রাখতে হবে।
এ ছাড়া পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হলে প্রত্যেক পরিচালককে ন্যূনতম শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার রাখতে হবে।
এ সংক্রান্ত সংশোধনে বেতনভোগী শীর্ষ নির্বাহী (এক্স-অফিসও) পরিচালকদের শেয়ার ধারণ করতে হবে না মর্মে ব্যাখ্যা যুক্ত হবে। বিদ্যমান নির্দেশনায় এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। কেবল স্বতন্ত্র পরিচালক, ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী পরিচালক, বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বীমা গ্রহীতাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী পরিচালকের শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নেই।
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান সম্প্রতি বলেন, কমিশনের প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। শেয়ারবাজার ধসের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্তও তারই একটা অংশ।
সাইফুর রহমান বলেন, শেয়ার ধারণের বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত নেওয়ার কথা বলেছে। কারণ বিএসইসির এ নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি রিট মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় নির্দেশনাটি সংশোধনের সুযোগ আছে কি-না, সেটি তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্সসহ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালকদের দায়ের করা রিট মামলা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তারা কমিশনের ওই নির্দেশনাকে অবৈধ ঘোষণার জন্য রিট করেন।
যদিও এর আগে আরও কয়েকটি কোম্পানির রিট হাইকোর্টে খারিজ হয়েছিল। এমনকি আপিল বিভাগও কমিশনের নির্দেশনাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।