২৬ আগস্ট ২০১৬ শুক্রবার, ০৮:২৪ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
ঈদুল আযহার বেশ কয়েকদিন রয়েছে। এখনও গরুর হাট বসেনি। কিন্তু তাতে কী! এরই মধ্যে অনলাইনে জমে উঠছে পশুর হাট। বিক্রয় ডটকম, এখানেই ডটকম, আমারদেশ ই-শপ এবং হাটেরগরু ডটকমসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। এতে সাড়াও মিলছে বেশ। কোরবানির হাটে মানুষের ভিড়, দালালদের খপ্পর, বাজারের অস্থিরতা- এসব ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা বেছে নিয়েছেন পশুর ভার্চুয়াল হাটকে। পশু কেনাবেচার জন্য খোলা হয়েছে নতুন নতুন ফেসবুক পেইজও। এসব পেইজে ক্রেতারা শুধু গরু-ছাগলের ছবিই দেখতে পাচ্ছেন না; পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রং, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানও দেয়া থাকছে পোস্টে। ক্রেতারা চাইলে স্বচক্ষে পশু দেখতে যেতে পারেন। আর ছবি দেখেই কিনতে চাইলে বিক্রেতা সেই পশু পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতার ঘরে।
হাট থেকে গরু কিনে এনে কয়েক দিন বাড়িতে লালন-পালন করার ঝামেলা এড়াতে ক্রেতারা যেমন ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখছেন, তেমনি অনেক বিক্রেতা হাটে গরু নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে চান না। তাই তারা ঝুঁকছেন অনলাইনের দিকে।রাজধানীর মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ার সাশ্রয় এগ্রো নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজিউর রহমান বিক্রয়ডটকমসহ একাধিক ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১টি গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি একটি করে গরুর বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রেতার ফোন পেয়েছি। এখনও কোনো গরু বিক্রি না হলেও দাম-দর হচ্ছে। আশা করছি আগামি সপ্তাহ থেকেই বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।
তিনি আরো জানান, তার কাছে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। রাজিউর আরও জানান, গত চার বছর ধরে তিনি অনলাইনে কোরবানির গরু বিক্রি করছেন। প্রতিবছর তিনি ১৫ থেকে ২৫টি গরু আনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক গরু বিক্রেতা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি কালো রংয়ের একটি ষাঁড় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এর দাম চাওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিকালেই এক এক করে লোক এসে তার গরু দেখে গেছেনে। ওই ক্রেতা গরুটি কিনতে ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছেন।
২২ আগস্ট সকালে একটি লাল রংয়ের বলদ গরুর বিজ্ঞাপন দেয়া জহিরুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৪ মণ ওজনের ওই গরুটির উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। লম্বা ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি। পাশ প্রায় ৩ ফুট। এর দাম হাঁকানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা।
তিনি জানান, তার আরও কয়েকটি গরু আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোর বিজ্ঞাপন আনলাইনে দেয়া হবে। জহিরুল আরও জানান, তার গরুগুলো রোগ এবং কৃমিমুক্ত। তার সবগুলো গরুই ভ্যাক্সিন করা বলদ।
নাজিম উদ্দিন নামে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, গরুর হাটে সাধারণ পশুগুলোকে উঁচুতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ কারণে ছোট গরুও অনেক বড় দেখায়। কিন্তু ফার্মে এ সুযোগ নেই। আমাদের একটি ঠিকানা আছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতারা সরাসরি ফার্মে চলে আসেন। কিন্তু হাট থেকে একবার গরু কিনে নেয়ার পর বিক্রেতাদের আর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ক্রেতা জানবেও না যে গরুটিকে কী খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু কেউ ফার্মে গরু কিনতে আসলে তিনি দেখতে পারেন গরুকে কী খাওয়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কেউ আগেভাগে সাশ্রয়ী মূল্যে গরু কিনে আমাদের ফার্মে রাখতে পারে। চাইলে ওই ক্রেতাকে কুরবানির আগে ডেলিভারি দেয়া হয়।গাজীপুরের শ্রীপুরের আবদুল বাতেন বৃহস্পতিবার সকালে একটি ষাঁড় বিক্রির জন্যে ছবিসহ পোস্ট দিয়েছেন। গরুটির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে টেলিফোনে আবদুল বাতেন বলেন, আমি গরু ব্যবসায়ী নই। অনেক শখ করে কয়েক বছর ধরে কালো রংয়ের এই ষাঁড়টি লালন-পালন করেছি। এর পেছনে এরই মধ্যে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিজের গাভীর এ বাছুরটি এখন অনেক বড় হয়েছে। বাজারে নিয়ে যাওয়া ঝামেলা হবে বলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এরই মধ্যে দুইজন ক্রেতা ফোন করেছে।
বাড়ির গরু শিরোনামে উত্তরার জাহিদী হাসান নামের এক ব্যক্তি গত ২১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিক্রয়ডটকমের মাধ্যমে গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।এতে লিখা হয়েছে, মোটা তাজা দেখতে সুন্দর গরু। নিজ বাড়িতে লালন পালন করা গরু। ৮টি গরু বিক্রি হবে। গরুগুলোকে গ্রামের খাবার যেমন- বিচালি, গাছের পাতা, মাঠের ঘাস, ভাতের মাড় খাওয়ানো হয়। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হয়নি।বিজ্ঞাপনের নিচে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, ফোন ধরেন জিয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
তিনি জানান, তার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীতে। তিনি ১২টি গরু বিক্রি করবেন। তার ভাইয়ের শ্যালক জাহিদী উত্তরায় থাকেন। বিক্রির সুবিধার্থে জাহিদী গরুগুলোর ছবি তুলে উত্তরায় ঠিকানায় ৮টি গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। গরু কিনতে অনেকেই ফোন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিগগিরই বাকি গরুর বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা ও অনলাইনে গরুর ক্রেতা শাহীন আলম বলেন, ভিড় ঠেলে কাঁদা মাড়িয়ে কোরবানির হাটে গিয়ে পশু কিনতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। গত বছর অনলাইনের মধ্যেমে পশু খুব স্বাচ্ছন্দে কোরবানির গরু কিনেছিলাম। এবারও একইভাবে পশু কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠে গরু নিতে গেলে ব্যবসায়ী বা বিক্রেতাদের পরিবহন খরচসহ নানা কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। তাই পশুর দাম বেড়ে যায়। কিন্তু অনলাইনে এ ধরনের খরচ লাগে না। তাই তুলনামূলক কম দামে গরু কেনা যায়।শান্তিনগরের ক্রেতা শফিকুল আযম জানান, গত বছর বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় হাটে গিয়ে গরু কিনতে নাকাল হয়েছি। তাই এবার অনলাইন মাধ্যমে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকগুলো গরু দেখে যেটা পছন্দ হবে সেটা দেখতে ইচ্ছে করলে বিক্রেতার কাছে চলে যাবো।
বিক্রয়ডটকম তার ফেসবুক পেজে লিখেছে- এই ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কুরবানীর অনলাইন ক্রেতাদের জন্য নিয়ে এসেছে আকর্ষণীয় অফার। ত্যাগের মহিমার কোরবানিতে, বিক্রয় গ্রাহকদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে দেশের বিখ্যাত মীর কাদিম এবং চেন্নাই এক্সপ্রেস গরু। এ গরুগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- এগুলো সেরা জৈব খাদ্য খেয়ে পালিত, এর মাংস উৎকৃষ্ট, স্বাস্থ্যকর এবং এগুলো ক্ষতিকর ইনজেকশন মুক্ত। ক্রেতারা এই পশুগুলো কিনতে ক্রয়মূল্য থেকে ৭০ ভাগ মূল্য ছাড়ের সুযোগ পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে http://www.bikroy.com/qurbani ভিজিট করা যেতে পারে।
বিক্রয়ডটকমের ফেজবুক পেজে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সবসময় বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি দেখা করবেন। আপনি যা কিনতে যাচ্ছেন তা দেখার আগে কোনো টাকা পরিশোধ করবেন না। অচেনা কারও কাছে টাকা পাঠাবেন না। আমারদেশ ই-শপ নামের ওয়েবসাইটের কর্ণধার সাদেকা হাসান জানান, এরই মধ্যে তার ওয়েবসাইটে বেশকিছু গরু-ছাগলের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। অর্ডারও শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি বিক্রি অনেক ভাল হবে। অনলাইন গরুর হাট সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানেই ডটকমের কর্মকর্তা আফসানা আক্তার বলেন, এ হাটের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশ আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতারা অনলাইন হাটের দিকে আগ্রহী হয়েছে। ফোকাসবাংলা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।