facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

আল আমিন হত্যা মামলায় এতো আসামী কে দিল?


২১ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার, ০৪:৫৭  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


আল আমিন হত্যা মামলায় এতো আসামী কে দিল?

আল আমিন হত্যা মামলায় এতো আসামী কোথা থেকে এসেছে, তাও জানেন না মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন। এখন মামলার বাদী ইসলাইল হোসেন মামলাটি সংশোধন করতে চাচ্ছেন।

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকার সাভার উপজেলার বাইপাইলে গুলিতে নিহত হন আল আমীন (২৯) নামের এক যুবক। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন আল আমীনের পিতা ইসমাইল হোসেন। মামলাটি করতে ইসমাইলকে সহায়তা করেন শরীয়তপুর জেলার কয়েকজন বিএনপি নেতা। মামলার বাদী বলছেন, "মামলায় এমন কিছু ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে, যাঁরা খোলা চোখে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। 

আমি মামলাটি সংশোধন করতে চাই"।

 ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের দক্ষিণ মগর গ্রামের ইসমাইল ও জিয়াসমিন বেগম দম্পতির ছেলে আল আমীন। তিনি সৌদি আরবে থাকতেন। চার মাস আগে দেশে ফিরে সাভারের বাইপাইল এলাকায় বাবার সঙ্গে মুদি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিছিলে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর আর তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছিল না তার পরিবার। ১৭ আগস্ট শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তাঁর লাশ খুঁজে পান পরিবারের সদস্যরা। এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আল আমীনের পিতা ইসমাইল হোসেনের করা মামলায় যে ১৫৪ জনকে আসামী করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, অপু উকিল প্রমুখ। 

মামলায় আরও আসামী করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আব্দুস সালাম, আবুল কালাম খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার, অসুস্থ চিকিৎসক মডার্ন হারবালের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর মতি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক আশরাফুল হক, নড়িয়া উপজেলা সহকারী সমবায় কর্মকর্তা শাহাদত হোসেনকে। মামলার ১৫৪ জন আসামীর নামের মধ্যে অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ীর নামও আছে।

মামলার পর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক দিলরুবা আফরোজ ২১ অক্টোবরের মধ্যে আল আমীনের মৃত্যুর ঘটনায় কোন সাধারণ ডায়েরী, কোন অপমৃত্যু মামলা ও কোন নিয়মিত মামলা হয়েছে কি না বা ওই ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে কি না, তা জানাতে ঢাকার কাফরুল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদী ইসমাইল হোসেনের দাবী, এই মামলার পেছনে আছেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাদন মুন্সি ও একটি হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী বাবুল তালুকদার। বাবুল তালুকদার শরীয়তপুর জজ কোর্টের সাবেক সরকারী কৌসুলী (পিপি) হাবীবুর রহমান ও তাঁর ছোট ভাই মনির হোসেন মুন্সিকে হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন পলাতক আছেন। 

আল আমীন হত্যা মামলায় আসামীর তালিকায় আরও যাদের নাম এসেছে তারা হলেন মরহুম হাবীবুর রহমানের ছেলে পারভেজ রহমান, মেজবাউর রহমান ও মনির হোসেনের ছেলে বোরহান মুন্সির। এ ছাড়া দুই ভাই হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামীকেও আল আমীন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। 

মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন বলেন, "বিএনপি`র কয়েকজন নেতা ও শরীয়তপুর শহরের একটি হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামী আমার সঙ্গে মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তারা আমাকে সহযোগীতা করার কথা বলে ডেকেছিলেন। বলেছেন এক রকম, আর কাজ করেছেন তার উল্টো। আমি বুঝতেও পারিনি আমাকে ব্যবহার করে এভাবে বিভিন্ন মানুষের নাম মামলায় দেয়া হবে। মামলাটি করার জন্য উকিলের মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। ওই স্বাক্ষর দিয়ে এখন আমি ফেঁসে গেছি। আমি আইনগত ভাবেই মামলাটি সংশোধন করার চেষ্টা করছি"।

মামলার আসামী হিসেবে আরও নাম এসেছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আব্দুস সালামের। তিনি মুঠোফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, "আমি জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। ঘটনার সময় আমি দেশেই ছিলাম না। শত্রুতাবশত আমাকে আসামী করা হয়েছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, "সরকার পতনের পর একটি চক্র আমার বাড়িতে হামলা চালায়। ওই চক্রটিই ষড়যন্ত্র করে একটি মামলায় আমাকে ফাঁসানোর জন্য আসামী করেছে"।

মডার্ন হারবালের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক আলমগীর মতি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। প্রায়ই শয্যাশায়ী থাকেন। তাঁর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের স্যার অসুস্থ। তিনি হাঁটাচলা করার সময় অন্যের সহযোগিতা নেন। এমন একজন মানুষকে হত্যা মামলায় আসামী করায় আমরা হতভম্ব হয়ে গেছি"।

নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাদন মুন্সি ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তিনি সকালে হোয়াটসঅ্যাপে দৈনিক বাংলাকে বলেন,"আল আমীনের বাবা মামলা করার সহযোগীতা চেয়ে তাঁকে ফোন করেছিলেন। এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। কারা মামলায় আসামী হয়েছেন তাও তিনি জানেন না বলে দাবী করেন।

সরেজমিনে গত শনিবার সকালে আল আমীনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা জিয়াসমিন ও বোন আফলান সিনথিয়া কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। একটি টিনের ঘরে মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন জিয়াসমিন। সাংবাদিক এসেছেন খবর পেয়ে বসতঘরে আসেন। বলেন,"ছেলে মারা গেছে আড়াই মাস হয়েছে। তার জন্য মন হাহাকার করছে। এর মধ্যে মামলার যন্ত্রণা ও উৎপাতে পড়েছি"। এভাবে মামলাটি তাঁরা চালাতে চান না।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: