facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৫ মার্চ শনিবার, ২০২৫

Walton

ইসলামে রোজা এল যেভাবে


১৪ মার্চ ২০২৫ শুক্রবার, ১১:০৭  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ইসলামে রোজা এল যেভাবে

রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানেরা আইয়ামে বিয ও আশুরার রোজা রাখতেন। তবে সেটি তাদের ওপর ফরজ ছিল না, ছিল সুন্নত। আইয়ামে বিয বা প্রতিমাসের মাঝখানের তিন দিন রোজা ইসলামপূর্ব সময়ের মতো করে রাখা হতো। মদিনায় হিজরতের পরে ইহুদিদের আশুরার রোজা পালন দেখে মহররম মাসে মুসলিমগণ তাদের চেয়েও একদিন বেশি রোজা রাখা শুরু করে। কিন্তু এসবই ছিল ঐচ্ছিক, রাখার জন্য বাধ্য-বাধকতা ছিল না। (শারহুন নাবাবি আলাল মুসলিম, হাদিস: ১১২৫)

তবে রোজা এক বিধানে একযোগে ফরজ করা হয়নি, বরং ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে ফরজ করা হয়।

ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস যখন মুসলমানদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে গেল, নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা বৃদ্ধি পেতে পেতে ভালোবাসার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাল এবং তাদের মধ্যে শরিয়তের হুকুম-আহকাম ও আল্লাহর নির্দেশ পালন করার এমন এক মন ও মেজাজ সৃষ্টি হয়ে গেল যে, মনে হচ্ছিল তারা যেন সে-সব হুকুম-আহকামের অপেক্ষায় থাকেন, তখন আল্লাহ তাআলা রোজার হুকুম নাজিল করলেন।

এটি হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষের ঘটনা। অর্থাৎ নবুওয়াতের পনেরোতম বছরে এসে রোজার বিধান অবতীর্ণ হয়। প্রথমে নাজিল হয় এই আয়াত, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

তবে প্রথমেই মাসব্যাপী রোজা ফরজ হয় নি। বরং হাতেগোনা কয়েক দিন রোজা ফরজ ছিল, যেন তা কঠিন মনে না হয়। (তাফসিরে তাবারি, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির, ৪১৩)

দ্বিতীয় পর্যায়ে এ আয়াত নাজিল হয়, ‘গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

তবে ফরজ হলেও রোজা না রেখে তার বদলে মিসকিনদের খাওয়ানোর স্বাধীনতা তখনো ছিল।

মাআজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, প্রথমদিকে যার ইচ্ছা রাখত, যার ইচ্ছা না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করত। পরে এই সুযোগ রহিত হয়ে যায়। এরপরে নাজিল হয় রমজানে রোজা রাখার অপরিহার্য বিধান, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

আয়াত নাজিল করে রোজা সকলের জন্য আবশ্যিক করে প্রদত্ত স্বাধীনতাকে রহিত করা হয়েছে। উম্মাহের সকল ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এ-আয়াত প্রমাণ করে, রমজান মাসের রোজা ফরজ। যদি কোনো ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা রাখা না-রাখে, তাহলে সে কবিরা গুনাহ তথা মহাপাপের ভাগীদার হবে।

খ্যাতিমান ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) তার নবিয়ে রহমত গ্রন্থে বলেন, এভাবে ধাপে ধাপে রোজা ফরজ করার হিকমত হচ্ছে, বিধান প্রবর্তনের উম্মতের প্রতি সহজীকরণ ও ক্রমান্বয়িক নীতি পরিগ্রহণ। কারণ সিয়াম একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। মুসলমানরা আগে থেকে এ ব্যাপারে খুব একটা অভ্যস্ত ছিলেন না। যদি সূচনাতেই এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে ব্যাপারটি তাদের জন্য কঠিন হয়ে যেতো। তাই প্রথমে রোজা ও ফিদিয়ার মাঝে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আস্তে আস্তে তাদের একিন মজবুত হয়েছে, মানসিক অবস্থা স্থিরতা লাভ করেছে এবং ধীরে ধীরে রোজার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তখন স্বাধীনতা উঠিয়ে নিয়ে কেবল রোজাকে আবশ্যিক করা হয়েছে। কঠিন ও কষ্টসাধ্য বিধি-বিধানের ব্যাপারে ইসলামে এর বহু নজির বিদ্যমান। একে পরিভাষায় ক্রমান্বয়ে প্রবর্তন বলা হয়।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: