১৯ ডিসেম্বর ২০২১ রবিবার, ০২:১৪ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিশ্বজুড়ে ই-কমার্স খাতের বিকাশ গত শতকের শেষের দিকে হলেও এখন থেকে দশ বছর আগেও কেনাকাটার জন্য দেশের মানুষ অনলাইনের ওপর তেমন একটা নির্ভরশীল ছিল না। এর পেছনে দেশের অনুন্নত লজিস্টিকস খাত, সদ্য গড়ে ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থার অভাব, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর দুর্বলতার মতো নানাবিধ কারণকে দায়ী করা যায়। তবে, সময়ের সাথে এই দৃশ্যপটে এসেছে পরিবর্তন। প্রযুক্তির কল্যাণে স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা আর ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের ফলে মানুষের জীবনধারা এখন ডিজিটাল। সেই সাথে কেনাকাটায় অনলাইন নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলস্বরূপ দেশের ই-কমার্স খাত এগিয়ে যাচ্ছে দুর্দান্ত গতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের ই-কমার্স বাজার দাঁড়াবে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
মূলত, বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত গতি পেতে শুরু করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর। সে সময় দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে। এরপর মানুষের স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ই-কমার্স খাতে দেশিবিদেশি নতুন বিনিয়োগ এই খাতের বিকাশে ভূমিকা পালন করেছে। ই-কমার্স খাতের কল্যাণে বর্তমানে দৈনিক বাজার সদাই থেকে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেটের মতো পণ্যও মোবাইলের কয়েক ট্যাপে বাড়ির দোরগোড়ায় এসে হাজির হচ্ছে। বেশিরভাগ বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা প্রদানের সুব্যবস্থা থাকায় ক্রেতারা যেকোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন তাৎক্ষণিকভাবে। আবার, আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনের ফলে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সহজে মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
অনলাইন কেনাকাটায় সাধারণ মানুষের অভ্যস্ততা বৃদ্ধি ই-কমার্স খাতের প্রসারে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, করোনাভাইরাস প্রকোপের পর চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সময় মানুষ ঘরে বসে অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে পণ্য কিনতে বাধ্য হয়। এ সময় প্রচলিত পণ্যের বিপরীতে অনলাইনে মুদি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এই সঙ্কটকালে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারি করে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে এবং মানুষের অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর দেশে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে।1 লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ও গ্রাহকদের পরিবর্তিত চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনেক ব্যবসায়ী গতানুগতিক ধারার অফলাইন থেকে অনলাইনে বেচাকেনা শুরু করে এবং ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পণ্যবিক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
অনলাইন ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে হলে শুধু ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ খুলে মডারেটর নিয়োগ দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সহজ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সাশ্রয় এই তিনের সমন্বয়। তাই, ক্রেতাদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদানের ব্যাপারেও বিশেষ নজর দিতে হয়। সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়া বিক্রেতার বিক্রি ও প্রসার বৃদ্ধির পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করবে।
ক্রেতাদের সুলভ মূল্যে পণ্য দিতে বিশ্বের বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বছরের বিভিন্ন সময় আয়োজন করে থাকে নানাবিধ আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইন। এক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফ্রাইডে, সাইবার মানডে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। তবে, চীনের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আলীবাবার ১১.১১ ক্যাম্পেইন এই দুই ক্যাম্পেইনকে ইতোমধ্যে পেছনে ফেলেছে। দেশে আলীবাবার অঙ্গসংগঠন দারাজ বাংলাদেশের ১১.১১ ক্যাম্পেইন প্রতি বছরই ভাঙছে আগের বছরের বিক্রয়ের রেকর্ড। বছর শেষের উপহার হিসেবে সামনেই আসছে দারাজের ১২.১২ ক্যাম্পেইন। এই ওয়ানডে সেল ক্যাম্পেইনে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার ও ডিলের সাথে ক্রেতাদের অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ হবে, যা দেশের ই-কমার্স খাতের বিকাশ ত্বরাণ্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।