২২ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার, ০৫:১৬ পিএম
স্টাফ রিপোর্টার
শেয়ার বিজনেস24.কম
ঈদের ছুটিতে ঢাকার বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে চলে গেছে। ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই, মানুষের কোলাহলও কম। তাই ঢাকায় বেড়ানোর এখনই সুযোগ। ঈদের দিন অথবা পরের যেকোন দিন আপনি চাইলেই ঢাকার মধ্যে বা তার একটু পাশে ঘুরে আসতে পারেন আপনজনদের নিয়ে। ঢাকার মধ্যে বা তার একটু কাছে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বেড়ানোর স্থান রয়েছে, যেখানে আপনি পরিবার নিয়ে ঘুরতে পারবেন আনন্দ নিয়ে।
জাতীয় চিড়িয়াখানা
ঢাকার যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এবং প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঈদ এলেই এখানে প্রাণীপ্রেমীদের ভিড় লেগে যায়। তাই ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন রাজধানী মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বনের রাজা সিংহ থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলবে। প্রতিবছর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঈদের ছুটিতে (চার/পাঁচ দিনে) ৫ লক্ষাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। তাই ঈদের ছুটিতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন চিড়িয়াখানায়। দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য আগের মতোই। দুই বছরের ঊর্ধ্বের বয়সী সবাইকে ৫০ টাকার টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। আর চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত প্রাণী জাদুঘরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা।
আহসান মঞ্জিল
ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি স্পট “আহসান মঞ্জিল”। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং বিখ্যাত স্থান এটি। পুরান ঢাকার যানজটের কথা চিন্তা করে অনেকেই ওদিকে পা বাড়ান না। তবে এই ফাঁকা ঢাকায় একবার ঢু মারতে পারেন আহসান মঞ্জিলে। ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। ওয়াইজ ঘাটের সামনে এসে বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমির ঠিক সোজা তাকালেই চোখে পড়বে ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবাবদের আভিজাত্যের ছোঁয়া উপভোগ করার মতো মজা আর হবে না। খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
লালবাগ কেল্লা
মুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল এটি। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে লাল ইটের দর্শনীয় কেল্লাটি। সেই সঙ্গে দেখে আসতে পারেন কেল্লার পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ শাহী মসজিদও। পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে পরী বিবির মাজার। এখানে আছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা। রয়েছে একটি জাদুঘরও। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি।
হাতিরঝিল
এক পাশে সবুজ অন্যপাশে টলটলে জলের ওপর দিয়ে চলেছে যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস। ওয়াটার বাসে চড়ে ঘোরা যাবে পুরো হাতিরঝিল। মগবাজার থেকে রামপুরা এবং গুলশান পর্যন্ত এই ওয়াটার বাসে ভ্রমণ করা যাবে নির্ধারিত ভাড়ায়। হাতিরঝিলের প্রকৃত রূপ উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রাতের বেলা। আলো ঝলমলে ব্রিজ ও ঠাণ্ডা হাওয়া মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেবে।
রমনা পার্ক
রাজধানীর শাহবাগ ও বেইলি রোডের মিন্টু রোড এলাকা নিয়ে রমনা পার্কের অবস্থান। পার্কে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছ এবং মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পরিবার নিয়ে নিরিবিলি, শীতল একটি সময় কাটাতে চাইলে রমনা পার্ক হতে পারে আদর্শ স্থান। এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে নতুন একটি পার্কে। কোন প্রকার টিকিট ছাড়াই বেড়ানো যাবে এখানে।
শিশু মেলা
ঈদ তো শিশুদের জন্য, তাই ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত “ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড” বা “শিশু মেলা” থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়। রাজধানীর একটি শীর্ষস্থানীয় বিনোদন পার্ক এটি। ১৯৮৫ সালে “শিশু মেলা” নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সম্প্রতি শিশুদের এ বিনোদন কেন্দ্রটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে “ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড”।
এখানে পরিবারের ক্ষুদের সদস্যদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় সব রাইড। আবার বড়দের ফিরিয়ে দিতে পারে ফেলে আসা ছেলেবেলায়। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন শিশু পার্ক থেকে।
জাতীয় সংসদ ভবন ও চন্দ্রিমা উদ্যান
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থাপত্যশৈলীর বাস্তব উদাহরণ। মার্কিন স্থপতি লুই কানের নকশায় নির্মিত অত্যাধুনিক এই ভবনটি তার ব্যতিক্রমী আকার ও নকশার জন্য জনপ্রিয়। ভবনের প্রবেশাধিকার সাধারণ মানুষের না থাকলেও আশেপাশের পরিবেশ, কৃত্রিম লেক ও চন্দ্রিমা উদ্যান ঈদের ছুটিতে জমজমাট হয়ে ওঠে। ঘুরে আসতে পারেন কোন এক বিকেলে।
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক
রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার সায়েদাবাদ রেলক্রসিং এর পশ্চিম পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক। যা লোকমুখে সায়েদাবাদ পার্ক নামে পরিচিত। ব্যাক্তি উদ্যোগে সীমিত পরিসরে গড়েতোলা এই পার্কটিতে ট্রেন, ভয়েজার বোর্ড, প্যারাটুপার, টুইস্টার, সুপার চেয়ার, ফ্লাওয়ার ক্যাপ, মিটি ট্রেন, মিনি ক্যাব, বেবি কার, মেরি গো, ওয়ান্ডার হুইল, বাইনস চপার, থ্রি-হর্স প্রভৃতি সহ সর্বমোট ১৩টি রাইড রয়েছে। পার্কটির ভিতরে মেইন গেইট থেকে ৫০ গজ সামনে ৩টি ফুড কর্ণার রয়েছে। এখানে বার্গার, নুডুলস, চটপটি – ফুচকা, আইসক্রিম সহ বিভিন্ন পানীয় পাওয়া যায়।
নন্দন পার্ক
সবুজ-শ্যামলা শান্ত পরিবেশে মনের সব ক্লান্তি দূর করতে রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে চন্দ্রা ও বিকেএসপির মাঝামাঝি বারইপাড়া এলাকায় রয়েছে নন্দন পার্ক। ৩৩ একর জমির ওপর তৈরি সবুজে ঘেরা মনোরম এই পার্কটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্ক রিসোর্ট ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় তৈরি।
খাবারের জন্য রয়েছে চারটি ফুড কোর্ট। লকার ও ড্রেসিংরুমের সুবিধাও আছে। নন্দন পার্কটি বিভিন্ন ধরনের বিদেশি রাইডের সমন্বয়ে সাজানো। আধুনিক ও আকর্ষণীয় রাইডগুলোর তালিকায় রয়েছে ওয়াটার কোস্টার, কাটারপিলার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট, রিপলিং, মুন রেকার, রক ক্লাইমরিং, ওয়েব পুল, জিপ স্লাইড, কেবল কার, বাম্পার কার, নেট-এ-বল, সফট বল ক্যানন ইত্যাদি।
ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে রয়েছে আটটি রাইড। শিশুদের জন্য রয়েছে কেভ ট্রেন, ফ্লাই গো রাউন্ড, মিনি ক্রারোসলি ইত্যাদি রাইড। থিম, কিডস ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে মোট ২৭টি রাইড রয়েছে। ঈদের ছুটিতে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। আপনি চাইলে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
ফ্যান্টাসি কিংডম
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়াতে থিম পার্ক ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’ ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অন্যতম একটি জায়গা। ফ্যান্টাসি কিংডমে শিশু ও বড়দের উপযোগী ২০টিরও বেশি রাইড রয়েছে। পার্কটিতে এবছর প্রবেশ মূল্য এবং জনপ্রতি ১২টি রাইড উপভোগ করা যাবে এক হাজার টাকায়। ফ্যান্টাসি কিংডমের ওয়াটার এমিউজমেন্ট পার্ক ওয়াটার কিংডমে প্রবেশের জন্য, ওয়াটার কিংডমের সব রাইড এবং ফ্যান্টাসি কিংডমের ৩টি রাইড উপভোগের জন্যও জনপ্রতি গুণতে হবে এক হাজার টাকা।
কেউ যদি ফ্যান্টাসি কিংডম এবং ওয়াটার কিংডমের সব রাইড উপভোগ করতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফ্যান্টাসি কিংডম ও ওয়াটার কিংডমে প্রবেশমূল্যসহ জনপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে। এই প্যাকেজে তারা তিন ল্যাপ এক্সট্রিম রেসিং ও দুপুরের খাবারও উপভোগ করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক
উন্মুক্ত বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ অথবা ভালুক। পাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছ শান্ত প্রাণী হরিণ, জেব্রা, জিরাফ অথবা গয়াল। আপনি খুব কাছ থেকে দেখছেন। অথবা একটা-দুইটা নয়, শত শত ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে। কোনটা পেখম মেলে নাচছে। কোনটা ‘কেকা’ স্বরে ডাকছে। কিংবা হাত বাড়ালেই রংবেরঙের ম্যাকাউ পাখি এসে বসছে আপনার হাতে। ভাবছেন অবাস্তব। আসলে তা নয়। যদি আপনি এসব প্রাণী এবং পাখি খুব কাছে থেকে দেখতে চান যেতে হবে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। ঈদ উপলক্ষে বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এ সাফারি পার্ক প্রস্তুত করা হয়েছে নতুন সাজে।
৩৮ হাজারের বেশি একর বনভূমিতে গড়ে তোলা পার্কটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি কোর সাফারি এবং অপরটি সাফারি কিংডম। তবে সাফরি পার্কে প্রবেশ করতেই সামনে পড়বে বঙ্গবন্ধু চত্বর। এখানে রয়েছে পুরো পার্কের মানচিত্র। সামনে অল্প এগোলেই ডান পাশে পড়বে কোর সাফারি এবং বাম দিকে সাফারি কিংডম। এটিও রাখতে পারেন তালিকায়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।