facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৫

Walton

একীভূতকরণে প্রিমিয়ার সিমেন্ট: খরচ কমিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ


১৮ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার, ০৯:৩৫  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


একীভূতকরণে প্রিমিয়ার সিমেন্ট: খরচ কমিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ খরচ কমানো ও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার কৌশল হিসেবে এই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেয়ারবাজারে ঘোষণা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, প্রিমিয়ার সিমেন্ট গত রোববার একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় সহযোগী দুটি কোম্পানিকে একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শেয়ারধারী, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং আদালতের অনুমোদনের পরই একীভূতকরণ কার্যকর হবে।

একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য

প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, একীভূতকরণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদে লাভজনকতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা ও বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলসের ১৮% এবং প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের ৯৬% মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে রয়েছে। একীভূতকরণের মাধ্যমে এই দুটি কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের অধীনে চলে আসবে এবং আলাদা সত্তা হিসেবে তারা আর কার্যক্রম পরিচালনা করবে না।

ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস সম্পর্কে তথ্য

ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ইছানগরে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ সালে ১৮% মালিকানা অধিগ্রহণ করে প্রিমিয়ার সিমেন্ট। বাকি ৮২% শেয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে।

একীভূতকরণের ফলে ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ার প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করবেন এবং বিনিময়ে তারা প্রিমিয়ার সিমেন্টের সমপরিমাণ শেয়ার পাবেন।

এই কারখানার বার্ষিক সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানির টার্নওভার ছিল ৪৯৪ কোটি টাকা, এবং বছরের শেষে মোট মুনাফা হয়েছিল প্রায় ১.২৫ কোটি টাকা। একীভূতকরণের ফলে এই আয় প্রিমিয়ার সিমেন্টের আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন সম্পর্কে তথ্য

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন মূলত প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য নির্মিত হয়। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫ মেগাওয়াট, এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ ১০০% ব্যবহৃত হয় প্রিমিয়ার সিমেন্টের কারখানায়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৯৬% মালিকানা রয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে, বাকি ৪% শেয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একীভূত হলে এই ৪% শেয়ারও প্রিমিয়ার সিমেন্টের মালিকানায় যুক্ত হবে এবং উদ্যোক্তারা প্রিমিয়ার সিমেন্টের সমপরিমাণ শেয়ার পাবেন।

সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন ১০.৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, তবে বছরের শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১.৩২ কোটি টাকা।

পরিচালনা পর্ষদের ব্যাখ্যা

প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক জানিয়েছেন, “বর্তমানে কোম্পানি তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লোকবল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ব্যয় সবই আলাদা। তাই খরচ কমিয়ে আনতে সহযোগী দুটি কোম্পানিকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে খরচ কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানি লাভবান হবে।”

নতুন শেয়ার ইস্যু ও মূলধন বৃদ্ধি

প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে প্রায় ৩ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করতে হবে। এই নতুন শেয়ার ইস্যুর ফলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন শেয়ারগুলো ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে (ফেসভ্যালু) ইস্যু করা হবে এবং এটি আদালত ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।

কর্মসংস্থানের প্রভাব

বর্তমানে প্রিমিয়ার সিমেন্টে ১,৯০১ জন, ন্যাশনাল সিমেন্টে ৭৬২ জন ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনে ২৪ জন কর্মী কাজ করছেন। একীভূতকরণের পর মোট কর্মীসংখ্যা দাঁড়াবে ২,৬৮৭ জন।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একীভূত হওয়ার পরও কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। বরং তারা প্রিমিয়ার সিমেন্টের কর্মী হিসেবে নিয়োগ পাবেন এবং আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাবেন।

শেষ কথা

প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের একীভূতকরণ প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস, মূলধন বৃদ্ধি এবং বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সুসংহত করতে সহায়ক হবে। এই একীভূতকরণ কার্যকর হলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট একীভূত কোম্পানিগুলোর আয় ও সম্পদ নিজেদের অধীনে আনতে পারবে, যা ভবিষ্যতে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও লাভজনক হতে পারে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: