facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর শনিবার, ২০২৪

Walton

এক মৌসুমেই ১৬০ বিয়ের পোশাক বানিয়েছেন ডিজাইনার সাফিয়া সাথী


০৫ এপ্রিল ২০২৩ বুধবার, ১২:৩২  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


এক মৌসুমেই ১৬০ বিয়ের পোশাক বানিয়েছেন ডিজাইনার সাফিয়া সাথী

ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন তাকে খুব টানে। পত্রিকায় সুন্দর পোশাকের ছবি দেখলেই কেটে রাখতেন। সেসব দেখে পুরোনো কাপড় কেটে পুতুলের পোশাকের নকশা করতেন। নতুন জামা পরিয়ে টিভির পাশে সাজিয়ে রাখতেন সেসব পুতুল। সেই শখের পোশাক তৈরিই এখন তার পেশা। শুধু পেশা বললে কম বলা হবে, নেশাও। না হলে সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা পোশাকের নকশায় বুঁদ হয়ে থাকা কঠিন। করোনার সময়েও সারা দেশ যখন ঘরবন্দী, ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে অবিরাম কাজ করে গেছেন সাফিয়া সাথী। এখন তো তারকারাও নিয়মিত পরেন এই তরুণ ডিজাইনারের পোশাক।

বিজ্ঞাপনের শুটে গাজীপুর, তো কাল সিনেমার কস্টিউম নিয়ে কলকাতা। স্টুডিওতে থাকলেও এই বেলা ‘ক্লায়েন্ট মিটিং’ তো পরের বেলা কারিগরের ডেরা পরিদর্শন। কখনো দেখছেন সুতায় জরির কাজটা ঠিকমতো বসল কি না, কখনো পরখ করছেন চুমকি ও পুঁতির কাজ। এতশত ব্যস্ততার মধ্যেই সময় দিলেন। একদিন রাত ১০টার দিকে মহানগর প্রকল্পে তার কারখানা কাম স্টুডিওতে হাজির হই। পরের দিনের ডেলিভারি নিয়ে তখনো ব্যস্ত সাফিয়া সাথী।

স্বাগত জানিয়ে তার অফিসঘরে নিয়ে বসালেন। সাফিয়া সাথী বলেন, ‘কেউ যখন এত আগ্রহ নিয়ে আমার নকশা করা পোশাক পরতে চায়, সেটার মর্যাদা তো রাখতে হবে। অনেকে হয়তো দেশের বাইরে থেকেই ফোনে অর্ডার করেন। এরপর এক–দুই মাস সময় নিয়ে সেই পোশাকটি যখন তৈরি হয়ে আসে, কনে ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর আমার পরীক্ষার ফল বেরোয়। কনের মুখের চওড়া হাসিই আমাকে পরের পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে সাহায্য করে।’

প্রতিটি তরুণ–তরুণীর কাছেই তার বিয়ের দিনটা বিশেষ। নিজের আজীবনের লালন করা স্বপ্ন যেন বিয়ের সাজে পূর্ণতা পায়। সেই বিশেষ দিনের পোশাকটা তৈরি করতে গিয়ে তাই সাফিয়া সাথীকেও অনেক চাপে থাকতে হয়, ‘কাজ করার সময়ের পরিশ্রম তো কম হয় না। কিন্তু কেউ যখন বিয়ের পোশাক দেখে প্রথম এক্সপ্রেশন দেয় ‘ও মাই গড’, মনে হয় যাক পাস করেছি তাহলে। অনেকেই আবেগে কেঁদে ফেলেন।’

টাঙ্গাইলের মেয়ে সাফিয়া সাথী পড়তে চেয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনিং। কিন্তু পরিবারের খুব একটা সায় ছিল না। তাই ভর্তি হলেন সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে (বর্তমানে কলেজের নাম । প্রথম বর্ষে থাকতেই ২০১৩ সালে ফেসবুকে নিজের একটা পেজ খুলে ফেলেন। সেখানে নানা রকম কামিজ, কুর্তার নকশা করে পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। শুরু থেকেই সবাই অনেক প্রশংসা করতেন। ‘আমার বড় বোনেরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ওদের হলের বান্ধবীরাও আমাকে দিয়ে পোশাক বানিয়ে নিতেন। আমি টিউশনি না করে, বরং ডিজাইন আর ব্যবসায় মনোযোগ দিলাম,’ শুরুর দিককার দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন সাফিয়া।

এ সময় নিজের কোনো ফ্যাক্টরি ছিল না, ডিজাইন করে সেটা বানিয়ে আনতে নানা জায়গায় ধরনা দিতে হতো। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে প্রতিটি মৌসুমের আগে যতগুলো পোশাক বানাতেন, সবই বিক্রি হয়ে যেত। তবে নতুন কোনো পোশাক ডিজাইন করলেই কয়েক দিনের মধ্যে কপি হয়ে যেত। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে মাথায় হঠাৎ চিন্তা আসে, আচ্ছা ওয়েডিং প্ল্যানিং করলে কেমন হয়। সেই কাজও শুরু করলেন। আর বিয়ের পোশাক বানানোর দিকে ঝুঁকলেন কবে? সাফিয়া সাথী বলেন, ‘পরিচিত একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, একটি মেয়ে তার বিয়েতে গাউন পরতে চান।

কিন্তু মনমতো কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি আমাকে অর্ডার দিতে চান। ভয়ে ভয়ে অর্ডারটা নিলাম। বানানোর পর বেশ প্রশংসা পেলাম। পরপর বেশ কয়েকটা অর্ডার এল।’ এদিকে ওয়েডিং প্ল্যানিংয়ের ব্যবসাও জমে উঠল। বিয়ের পোশাক থেকে সাজসজ্জা—সব সুবিধা একসঙ্গে পাওয়ায় লোকজনও আগ্রহ বাড়ালেন। আর সেই সুবাদে বিয়ের পোশাকের ফরমাশও বেড়ে গেল।

মূলত ২০১৯ সাল থেকেই ফরমাশের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তবে পরের বছর করোনার কারণে কয়েক মাস একটু ভুগতে হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে অর্ডার আবার বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে ঢাকার একটি মাল্টি ব্র্যান্ড শপের ভেতরে নিজের একটি কর্নার নিলেন সাফিয়া। আর এখন ঢাকার গুলশান ও মহানগর প্রজেক্টে তার দুটি স্টুডিও। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৩৫ জন।

বাংলাদেশে বিয়ের কনে মানেই শাড়ি পরা টুকটুকে বউ। তবে এটাও সত্যি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কনেদের রুচিতেও বদল এসেছে। শাড়ির পাশাপাশি এখন লেহেঙ্গা, গাউনের মতো পোশাকও পরেন কনেরা। মূলত বিয়ের লেহেঙ্গা ও গাউনের নকশা করেন সাফিয়া সাথী। বিয়ের লেহেঙ্গা বা গাউনে দেশি আবহ রাখার চেষ্টা করেন সাফিয়া। সে কারণেই তাঁর নকশায় পালকি, কুলার মতো মোটিফ দেখা যায়।

২০২২ সাল থেকে বিয়ের শাড়ি, বিশেষ করে বেনারসির নকশা শুরু করেছেন সাফিয়া। সামনে বেনারসিকে আরও নানা আঙ্গিকে উপস্থাপনের ইচ্ছে আছে। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বিয়ের মৌসুমে ১৬০টির মতো বিয়ের পোশাক বানিয়ে দিয়েছেন। দুই থেকে তিন মাস আগে বিয়ের পোশাকের অর্ডার না দিলে অনেক সময়ই গ্রাহকদের এখন ‘সরি’ শুনতে হয়।

শুধু বিয়ের পোশাক না, বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রিক পোশাকও এখন নকশা করছেন সাথী। ঈদের আগে তাই শাড়ি, পাঞ্জাবি বা অন্য নানা রকম ফরমাশ আসছে। তারকাদের পার্টি কিংবা লালগালিচায় হাঁটার পোশাকের অনুরোধও আসে সাফিয়ার কাছে।

সাফিয়া সাথী বলেন, ‘অনেক তারকার সঙ্গেই বিজ্ঞাপনের কস্টিউম ডিজাইন করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে। কেউ কেউ নিজে থেকে পরিচিত হয়ে পোশাকের ফরমাশ দিয়েছেন।’ জেকে ১৯৭১, গণ্ডি, অবিনশ্বর ও নুর নামে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের কস্টিউম ডিজাইনও করেছেন সাফিয়া। কিন্তু বিয়ের পোশাক নিয়ে এত ব্যস্ততার কারণে কস্টিউমের নকশা করা কঠিন হয়ে পড়ছে আজকাল। সাফিয়া সাথী বলেন, ‘বিয়ের মৌসুম শেষ হতে না হতেই এখন আবার ঈদের পোশাক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এভাবেই দিন কাটছে।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: