facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার, ২০২৫

Walton

ঐতিহাসিক ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ: একদিনের মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ


১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার, ০৮:১২  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ঐতিহাসিক ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ: একদিনের মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ

বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। শতাব্দীপ্রাচীন এই স্থাপনা ইতিহাসপ্রেমী এবং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। ঢাকা থেকে সহজেই একদিনের সফরে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক দুর্গটি।

ঐতিহাসিক পটভূমি

নদীমাতৃক বাংলাদেশে যুগে যুগে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলী। ষোড়শ শতাব্দীর এক গৌরবময় স্মৃতিচিহ্ন ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম নেতা ঈশা খাঁ এখানে তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ১৫৮৫ সালে কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে তিনি দুর্গটি দখল করেন এবং পরবর্তীতে এটি সংস্কার করেন। এই দুর্গ থেকেই তিনি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে তার ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন।

জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অবস্থান

কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নে অবস্থিত জঙ্গলবাড়ি গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এই ঐতিহাসিক দুর্গ। নরসুন্দা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই দুর্গ একসময় বাংলার প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত।

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপত্যশৈলী

জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। দুটি প্রধান চত্বর বিভক্ত এই দুর্গের উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ইটের প্রাচীর রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে ‘প্রাসাদ প্রাচীর’ নামে পরিচিত। দক্ষিণ অংশে রয়েছে একতলা ভবন ‘করাচি’ এবং ‘অন্দর মহল’।

এছাড়া এখানে রয়েছে:

  • ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার: যেখানে ঈশা খাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ছবি ও বংশধরদের তালিকা সংরক্ষিত আছে।
  • প্রাচীন মসজিদ: তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট চওড়া মসজিদটি ঈশা খাঁর আমলে নির্মিত।
  • পরিখা ও দীঘি: দুর্গের চারপাশে গভীর পরিখা ছিল যা বর্তমানে নরসুন্দা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এছাড়াও রয়েছে ঈশা খাঁর আমলে খনন করা বিশাল দীঘি।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পৌঁছানোর জন্য দুটি প্রধান উপায় আছে:

  1. বাসে: মহাখালী বা সায়েদাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসে গাইটাল পর্যন্ত যাওয়া যায় (ভাড়া: ৩০০-৪০০ টাকা)।
  2. ট্রেনে: কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনে যাওয়া যায় (ভাড়া: ১৩৫-৩৬৮ টাকা)।

কিশোরগঞ্জ শহরে পৌঁছে একরামপুর মোড় থেকে ইজি বাইক বা সিএনজি নিয়ে জঙ্গলবাড়ি দুর্গে পৌঁছানো যায় (ভাড়া জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা, রিজার্ভ নিলে ৪০০-৫০০ টাকা)।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

দুর্গের আশেপাশে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। কিশোরগঞ্জ শহরে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, পাশাপাশি অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি ডাকবাংলোতেও থাকা যেতে পারে। খাবারের জন্য জঙ্গলবাড়ি বাজারের হোটেলগুলোতে সাধারণ ভাত, মাছ ও মাংস পাওয়া যায়। তবে কিশোরগঞ্জ শহরে বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি, চালকুমড়ার মোরব্বা, গরুর মাংসের সমুচা ইত্যাদি খেতে ভুলবেন না।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন:

  • কবি চন্দ্রাবতী মন্দির
  • মিঠামইন ও নিকলী হাওর
  • ঈশা খাঁর এগারসিন্দুর দুর্গ
  • কিশোরগঞ্জ লেক ওয়াচ টাওয়ার
  • গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি

শেষ কথা

ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ভ্রমণ মানে ইতিহাসের এক টুকরো অংশ ছুঁয়ে আসা। শতাব্দীপ্রাচীন এই দুর্গের দেয়ালে এখনো লেগে আছে বাংলার স্বাধিকার সংগ্রামের চিহ্ন। দুর্গের চারপাশের পরিবেশ আপনাকে নিয়ে যাবে এক অনন্য অতীতে, যেখানে ইতিহাস ও প্রকৃতি মিলে তৈরি করেছে এক অবিস্মরণীয় আবহ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: