০৬ নভেম্বর ২০২৪ বুধবার, ১২:০৭ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ৯টি ব্যবসায়িক গ্রুপের সম্পত্তি দেখভালের জন্য রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রুপগুলো হলো : সামিট, এস আলম, বেক্সিমকো, ওরিয়ন, নাসা, জেমকন ও নাবিল গ্রুপ।
ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে রাখা জামানত, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং গোপন করা অর্থ খুঁজে বের করার সুবিধার্থে এসব গ্রুপে রিসিভার নিয়োগের সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউর ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সোমবার রিসিভার নিয়োগের অনুমোদন দেন। গভর্নরের অনুমোদন পাওয়ায় যেকোনো সময় গ্রুপগুলোতে রিসিভার বসানো হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব খাটিয়ে এই সব গ্রুপগুলো ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছে। আর এসব অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার করেছে তারা।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা (১৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট আরেক ব্যবসায়ী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান সিঙ্গাপুরে বসেই একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা খাতে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের হিসাবে, আজিজ খান সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী। তাঁর সম্পদ ১১২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অথচ দেশে আজিজ খানের পরিবারের সাত সদস্যের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। কয়েক দেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে কয়েক শ বিলাসবহুল বাড়ি।
অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। এই শিল্প গ্রুপটি সাতটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নামে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ আছে। কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আত্মসাৎ করেছে আরও সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য রয়েছে। আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ‘অনিয়মে’ নাম আসা রাজশাহীভিত্তিক শিল্প গ্রুপ নাবিলের ঋণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকায়। জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং তাঁর ভাই কাজী আনিস আহমেদ ও কাজী ইনাম আহমেদ শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন লন্ডনে। বাংলাদেশ থেকে এ অর্থ কীভাবে পাচার করা হয়েছে, তা তদন্ত করছে বিএফআইইউ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগে আদালতের আদেশ ছিল। বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। গ্রুপটি শুধু জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।