০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার, ১১:৫৬ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি আয়োজন করেছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন বিভিন্ন বই প্রকাশনীর স্টল, লেখক আর বইপ্রেমীদের মিলনমেলায় ভরপুর। বইমেলা শুধু নতুন বইয়ের আনন্দ নিয়েই আসে না, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও করে দিয়েছে এই বইমেলা।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রকাশিত বইগুলো পাঠকদের কাছে বিক্রয় ও উপস্থাপনের জন্য স্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী নেন। তাঁদের বেশির ভাগই নেওয়া হয় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয়।
আবিদ, মাহবুবা, উত্তম, তাপসী ও স্বাগতা। তাঁরা এ বছর বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁদের মতো এবারের বইমেলায় বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কয়েক শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁরা বইমেলায় চাকরিটা কীভাবে পেলেন, তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
এ বছর ছোট-বড় ৪০০টির বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল নিয়ে বসেছে বইমেলা। প্রথমা প্রকাশন, আগামী প্রকাশনী, সময় প্রকাশন, কথাপ্রকাশ, অন্বেষা প্রকাশনীসহ বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখা গেল, স্টল ভেদে বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পাঠকদের বই দেখাচ্ছেন, কেউ আবার বই বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ইডেন মহিলা কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বাগতা সাহা। তিনি এবারের একুশে বইমেলায় এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে আগামী প্রকাশনীতে সিভি পাঠান। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এবারই প্রথম বইমেলায় এই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। তিনি বলেন, ‘বইমেলায় কাজ করছি খুব ভালো লাগছে। পাঠকেরা কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন, সে সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছি। বিভিন্ন লেখকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে, কথা হচ্ছে। এটাই আসলে বড় পাওয়া। আর মাস শেষে কিছু সম্মানী তো আছেই। সব মিলিয়ে এটি একটি মজার অভিজ্ঞতা।’
একই কলেজ থেকে অনার্স শেষ করেছেন মাহবুবা হোসেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর ফাঁকে এবারই প্রথম বইমেলায় সময় প্রকাশনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বইমেলায় কাজ করাটা সত্যিই খুব আনন্দের। এখানে না এলে সেটা বুঝতাম না। নতুন বই সম্পর্কে জানতে পারছি, লেখক-পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি কথা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কাজটা খুব উপভোগ করছি।’ ভালো কোনো স্থায়ী চাকরি না হলে সুযোগ পেলে আগামী বইমেলায়ও কাজ করতে চান মাহবুবা।
কথাপ্রকাশের স্টলে খণ্ডকালীন কাজ করতে আসা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ যেমন কাজ পেয়েছেন তাঁর এক পরিচিত বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। আর মোহাম্মদপুরের আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উত্তম বিশ্বাস নিজের আগ্রহ থেকেই অন্বেষা প্রকাশনে সিভি পাঠান। স্টলেই বই বিক্রির এক ফাঁকে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানতে চাওয়া হলো পড়াশোনার পাশাপাশি বইমেলায় কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় কি না। তাঁর ঝটপট উত্তরে, ‘বইমেলা শুরু হয় বেলা তিনটা থেকে, চলে রাত নয়টা পর্যন্ত, তাই তেমন একটা অসুবিধা হয় না।’
প্রথমা প্রকাশনে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছেন তাপসী শারমিন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও তিনি এই স্টলে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বইমেলায় কাজ করা শুধু আয়ের উপলক্ষ নয়, এখানে লেখক-পাঠকদের কাছ থেকে বিভিন্ন বইয়ের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানা যায়। আর বইপ্রেমীদের মধ্যে বই কেনার যে আনন্দ, এ বিষয়টি খুব উপভোগ করি।’
প্রথমা প্রকাশনের স্টলে কথা হয় এই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্টলে এ বছর ২০ জন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ করেছি। সাধারণত তাঁদের সঙ্গে পরিচিতদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যাঁরা একটু চটপটে এবং সুন্দর করে সাবলীল ভাষায় কথা বলতে পারেন, এমন শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। বইমেলায় যাঁরা ভালো করেন, সেসব শিক্ষার্থীকে আমরা স্থায়ীভাবেও নিয়োগ করি এবং সারা বছর বিভিন্ন বইমেলায় তাঁদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’
তাই যাঁরা আগামী বইমেলায় কাজ করতে চান, তাঁরা এ বছরের নভেম্বর–ডিসেম্বর থেকেই বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।