facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে গোটা জাতিকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে ফেলেছি


২২ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার, ১০:৫২  এএম

মো. আবদুর রহমান খান

শেয়ার বিজনেস24.কম


জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে গোটা জাতিকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে ফেলেছি

আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কীভাবে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে দেশকে গড়তে পারি, সেই বিষয়ে আমরা সবাই কাজ করছি। আমাদের মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির দুটো প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে কথা বলেছেন। একটা ছিল বৈষম্য করার বিষয়ে, বিশেষত অডিট সিলেকশনে ক্ষেত্রে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কাজ করেছি।

প্রতি বছর একজন করদাতাকে বারবার সিলেক্ট করার প্রক্রিয়াটি বন্ধ করা হয়েছে। অটোমেটেড না করা পর্যন্ত আমাদের কোনো আয়কর রিটার্ন ব্যক্তিগতভাবে সিলেক্ট করা বা ম্যানুয়ালি হবে না। এটা বন্ধ করে দিয়েছি। একইভাবে ভ্যাটের ক্ষেত্রেও, আমরা বলেছি যে আমাদের অটোমেটেড সিস্টেম রেডি না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো অডিট সিলেকশন করব না। এছাড়া যারা ভ্যাট রিটার্ন দেন অনলাইনে তাদের আবার পেপার রিটার্ন নিয়ে অফিসে যেতে হতো সই-স্বাক্ষরের জন্য। এখন থেকে এটাও আর করা লাগবে না। এটা আমরা চিহ্নিত করেছি এবং আপনারা দেখেছেন যে এ বছর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগটা নিয়েছেন। আমাকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা এমন ব্যবস্থা করব যাতে করদাতাদের কর দিতে অফিসে আসতে না হয় এবং এর একমাত্র সমাধান হলো অটোমেশন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমাদের করদাতারা সহজে অনলাইনে ই-রিটার্ন সাবমিট করতে পারেন, সহজে কর জমা দিতে পারেন।

প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। কারণ অটোমেশনে কর আহরণে বেশ ধৈর্য লাগে। এখানে টুকটাক সমস্যা থাকে এবং আমরা যখনই সমস্যাগুলো পাই, সেগুলো চিহ্নিত করি। সমস্যার অনেকাংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। সামনে আরো কিছু আপডেট দেয়া হবে। এরপর এ বছর আর আপডেট দেয়া হবে না। এরই মধ্যে দেখবেন অনেকগুলো সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আরেকটা বিষয় হলো আমাদের জাতীয় সমস্যা এটা যে আমরা গোটা জাতিকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে ফেলেছি। বিশেষ করে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে। আমরা যারা এ সম্মেলনের মঞ্চে বসে আছি, আমি বলব যে অত্যন্ত প্রথিতযশা সবাই। প্রত্যেককে মিথ্যা হলফনামা দিতে হয়, এ জমি এ দামে কিনেছি, এ জমি এ দামে বিক্রি করেছি এসব বিষয়ে। এখান থেকে আমাদের জাতিকে উদ্ধার করতে হবে বলে আমি মনে করি। এটার জন্য নিহাদ কবির একটা প্রস্তাব আমাকে দিয়েছেন সেটা আমার মাথায় আছে। তার পরও আমি বলব যে জমি বেচাকেনার ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি সবকিছু মাথায় নিয়ে প্রত্যেক নাগরিককে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক সত্যিকার অর্থে যে লেনদেনটা হয়েছে সেই লেনদেনটা ডিজিটালি আমাদের রেকর্ডেও আসতে হবে। ডিক্লারেশনেও কাউকে যেন মিথ্যা কথা বলতে না হয়। এটা একটা জাতীয় লজ্জা। আমি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে এটা মনে করি। একইভাবে আমাদের স্বর্ণ আমদানি বা অন্যান্য বিষয়ে যেমন আমি প্রায়ই আমার কলিগদের বলি, স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে যদি আমাকে কোনো সাধারণ নাগরিক প্রশ্ন করে আমার কোনো জবাব নেই এ প্রসঙ্গে। কারণ আমার রেকর্ড বলছে, স্বর্ণ আমদানির পরিমাণ খুবই কম অথচ জুয়েলারি সবগুলোয় টন টন স্বর্ণ। তাহলে কীভাবে এটা আসে! এগুলো আমরা অ্যাড্রেস করার জন্য চেষ্টা করছি।

অন্য বিষয়গুলো বিশেষ করে এ বছর আমরা যেটা চেষ্টা করছি, জাতীয় স্বার্থে যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করার। আপনারা দেখবেন যে গত কয়েক মাসে অনেকগুলো কাজ আমরা করেছি, যেগুলো করার সময় রাজস্ব আহরণকে আমরা গুরুত্ব দিইনি। ডিমের ওপর শুল্ক প্রত্যাহর করেছি, চিনির ওপর দুইবার শুল্ক প্রত্যাহার করেছি। সয়াবিন তেলের ওপরও শুল্ক প্রত্যাহার করেছি। চালের ওপর দুইবার শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলুর শুল্ক কমানো হয়েছে। পেঁয়াজ পুরোটাই শুল্কমুক্ত করেছি। আমার সহকর্মীদের বলেছি যে আপনারা যখন কাজ করবেন তখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থটা সবার আগে দেখবেন। আপনি যদি দেখেন কোনো নীতি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এনবিআরের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে কিন্তু জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে, আপনি দয়া করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। এক্ষেত্রে আমাদের অনেকেরই মানসিকতায় সমস্যা আছে। মানসিকতার জায়গায় পরিবর্তন এনে কীভাবে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।

আমাদের বাঙালি জাতি দুইবার রক্ত দিয়েছে। আমরা ’৭১-এ লাখ লাখ শহীদের বিনিময়ে দেশ পেয়েছি। আর সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষ জীবন দিলেন এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিলিয়ে দিলেন—এ মানুষগুলো প্রমাণ করেছে যে আমরা চাইলে দেশটাকে গড়তে পারি। আমি মনে করি আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ আপনাদের প্রতি যত বৈষম্যমূলক আইন আছে আমরা এগুলোও সব সংস্কার করব এবং এরই মধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে অনেকগুলো টিম গঠন করেছি, বাইরে কিছু পরামর্শ কমিটি করেছি, আরো বড় আকারে জাতীয় স্কেলে আমরা এ সংস্কারগুলো করব। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসব, আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমাদের করহারের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এটাও একটা বৈষম্য তৈরি করে। অথচ এনবিআরে যার খাতিরের ব্যক্তি আছেন, তিনি এসে চাপ দিলে দেখা যায়, একটা পরিমাণ কর ছাড় দেয়া হয়। আমরা এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে বের হতে চাই। যদি আমরা করহার কমাতে পারি তাহলে আমাদের যত বৈষম্যমূলক আইনকানুন আছে সেগুলোকে দূর করতে পারব। তাছাড়া বৈষম্যমূলক আইন কার্যকর করলে যে পরিমাণ কর কমবে সেটা পুষিয়ে নিতে পারব না আমরা এবং জাতি হিসেবে আরো ঋণগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হব। আমরা প্রতি বছর বড় বড় বাজেট করব, আমাদের ঋণের বোঝা বাড়বে এবং পরবর্তী জেনারেশনকে এ ঋণের বোঝা টেনে নিতে হবে। সেখান থেকে যদি পরিত্রাণ চাই তাহলে আমাদের নিজস্ব অর্থেই আমাদের জোগান দিতে হবে। সেই অর্থের জোগান আপনারাই দেবেন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যদি বাড়ে তাহলে কর জালের আওতা বাড়বে। আমরা ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। এখন কেবল আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

মো. আবদুর রহমান খান: চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)

[১১ নভেম্বর বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২৪-এ সম্মানিত অতিথির বক্তব্য]

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: