১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রবিবার, ০৬:৩২ পিএম
শরীয়ডপুর থেকে এম এ ওয়াদুদ মিয়া,
শেয়ার বিজনেস24.কম
জাজিরাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীদের পথ্য সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
১৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় সেই অনিয়মের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে অন্য এক চিত্র।
মূলতঃ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, নার্সিং ইনচার্জ এবং বাবর্চির দায়িত্বে অবহেলার কারণেই ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেন রোগীদের পথ্য সরবরাহে অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন। আর এই অনিয়মটি তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ করে আসছেন।
এদিকে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলছেন, সরকারী বিধি মোতাবেকই পথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
অপরদিকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুল হাসান বলছেন, অবশ্যই এটা বড় ধরনের অনিয়ম।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং ইনচার্জ সূত্রে জানা যায়, জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ৫৪ জন রোগী ভর্তি থাকে। ১৩ সেপ্টেম্বরও ৫৪ জন রোগী ভর্তি ছিলো এবং ঐ ৫৪ জন রোগীকেই পথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আর এ পথ্য সরবরাহ করতে গিয়েই হচ্ছে যতো অনিয়ম।
সরকারী বিধি মোতাবেক জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত প্রতিটি রোগীকে সকালের নাশতা হিসেবে ১শ গ্রাম ওজনের একটি রুটি, একটি ডিম এবং বড় সাইজের একটি সবরি কলা দেয়ার বিধান থাকলেও তা সঠিক ভাবে দেয়া হচ্ছে না। সেখানে প্রতিটি রোগীকে ৪০ গ্রাম ওজনের একটি রুটি, একটি ডিম এবং ছোট সাইজের একটি সাগর কলা দেয়া হয়েছে।
আর দুপুর এবং রাতের খাবার হিসেবে ভাতের সাথে ফার্মের মুরগী দেয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদার ভাতের সাথে ফার্মের মুরগী দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পরিমানে তা অনেক কম।
সরকারী বিধি মোতাবেক ঠিকাদার প্রতিটি রোগীকে ২৫০ গ্রাম করে ৫৪ জন রোগীর জন্য ১৩ কেজি ৫শ গ্রাম মুরগীর মাংস সরবরাহ করবেন। কিন্তু ঠিকাদার সেই ১৩ কেজি ৫শ গ্রাম মাংসের পরিবর্তে মাত্র ৪ কেজি মাংস সরবরাহ করেছেন। এতে করে প্রতিটি রোগী প্রতি বেলায় ১২৫ গ্রামের পরিবর্তে ৩৭ গ্রাম মুরগীর মাংস পেয়েছেন। আবার কখনও কখনও রোগীরা মাংসের পরিবর্তে দুই টুকরা আলু এবং সামান্য পরিমান মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে থাকেন।
আর এ সকল কাজ তদারকী করার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে তিনজন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক অর্থাৎ আবাসিক মেডিকেল অফিসার, নার্সিং ইনচার্জ এবং বাবর্চি রয়েছেন তারা ঠিকাদার কেন কম পথ্য সরবরাহ করছেন সে ব্যাপারে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। বরং কি এক অদৃশ্য স্বার্থের কারণে তারা ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করেছেন। আর এভাবেই ঠিকাদার রোগীদের পথ্য কম দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরকারী বিধি মোতাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রতিদিন রোগীদের পথ্য স্বাস্থ্যসম্মত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে তারপর রোগীদেরকে খেতে নির্দেশ দিবেন। কিন্তু আবাসিক মেডিকেল অফিসার কোন দিনই তা পরীক্ষা করেন না। এমন কি রোগীর পথ্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না হলো কি না তাও পর্যবেক্ষণ করেন না। বাস্তবিক অর্থে বাবর্চিকে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীর পথ্যকে রান্না করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, রান্নাকে পাহারা দেয়ার জন্য একটি বিড়ালকে সেখানে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, এ ব্যাপারটি দেখার দায়িত্ব ছিলো আর এম ও সাহেবের। এটা অবশ্যই বড় ধরনের অনিয়ম। এভাবে যদি ঠিকাদার রোগীদের জন্য পথ্য সরবরাহ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।