facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার, ২০২৫

Walton

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা: স্মার্ট মিটার হারাল দুই লাখ গ্রাহক


০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার, ১১:৩৪  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা: স্মার্ট মিটার হারাল দুই লাখ গ্রাহক

শতভাগ রাজস্ব আদায় ও সিস্টেম লস কমাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণের সুদ বৃদ্ধির কারণে বিপিডিবি গ্রাহক সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ২ লাখ ২৮ হাজারের বেশি গ্রাহক স্মার্ট মিটারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সংকোচন

চার বিভাগের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর উচ্চ সুদের ঋণ নিয়ে বিপিডিবি সিঙ্গেল-ফেজ ও থ্রি-ফেজ স্মার্ট মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করে। শুরুতে ৪ শতাংশ সুদ নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবায়নের মাঝপথে এসে সুদের হার ৬ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে কমিয়ে ১৫ বছর করা হয়েছে।

বর্ধিত খরচ ও প্রকল্প পরিবর্তন

২০২২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ মুহূর্তে এসে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় ৮৫ টাকা ধরে ডলার রেট হিসাব করা হলেও বর্তমানে তা ১২০ টাকা হয়ে গেছে। ফলে প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বৃদ্ধি ও গ্রাহক সংখ্যা হ্রাসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ছিল ৬১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যার মধ্যে এডিবির ঋণের পরিমাণ ছিল ৩২৯ কোটি টাকা। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ লাখ ২০ হাজার সিঙ্গেল-ফেজ এবং ৩০ হাজার থ্রি-ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু সংশোধিত বাজেটে ব্যয় ৭৭২ কোটি ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে—

  • সিঙ্গেল-ফেজ মিটার: ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮১টি (মূল পরিকল্পনার তুলনায় ২ লাখ ২২ হাজার ৪১৯টি কম)।
  • থ্রি-ফেজ মিটার: ২৩ হাজার ৯৬৩টি (৬ হাজার ৩৭টি কম)।
  • ডাটা কনসেনট্রেটর ইউনিট (ডিসিইউ): ১ হাজার ৭৫২টি কম।
  • হ্যান্ড হেল্ড ইউনিট: ৫টি কমানো হয়েছে।

অঞ্চলভিত্তিক পরিবর্তন

প্রকল্পের শুরুতে ৪টি বিভাগের ১৬টি উপজেলা ও ৩টি সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থাকলেও সংশোধনীতে উপজেলা সংখ্যা কমিয়ে ১০টি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগ বাদ দিয়ে শুধু কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সিলেট বিভাগেও শুধু সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগেই প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হবে।

পরিবর্তনের কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিপিডিবির দাবি, এডিবির ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, লোন পিরিয়ডের পরিবর্তন এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ জুন স্বাক্ষরিত সাবসিডিয়ারি লোন এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) অনুযায়ী সুদের হার ৬ শতাংশ করা হয় এবং লোন পিরিয়ড কমিয়ে ১৫ বছর নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, "প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে মূলত ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে। টেন্ডারের সময় ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা, যা বর্তমানে ১২০ টাকা হয়েছে। সরকারের ব্যয় সাশ্রয় পরিকল্পনার কারণেই মিটারের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে পুনরায় বাস্তবায়ন করা হতে পারে।"

প্রকল্প মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ২ বছর ৯ মাসে প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৭০ শতাংশ হয়েছে।

বৈঠকে প্রকল্প সংশোধনের ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সংশোধনীতে যেসব কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি কেনার প্রস্তাব থাকলেও সেটি বাতিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিশেষ প্রতিবেদন -এর সর্বশেষ