০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার, ০৭:২০ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
অ্যাবারডিন শহর থেকে স্বল্পবসতির লোকালয় পেরোতেই পাহাড়ি পথ পড়ল। মিনিট চল্লিশ এই পথ মাড়িয়ে পৌঁছে গেলাম ডুনোটার ক্যাসেলের পার্কিং লটে। সাগরতীরে একটি বিচ্ছিন্ন পাথুরে পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত ক্যাসেলটি স্কটল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। আশ্চর্য সুন্দর ক্যাসেলটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সাগরের ওপর শূন্যে ভেসে আছে। অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কার্বন ডেটিং করে এই ক্যাসেলকে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম পিকটিশ দুর্গের স্বীকৃতি দিয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ সাল থেকে ৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ধারণা করা হয়। ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভাইকিংরা এই দুর্গে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সে সময় স্কটল্যান্ডের রাজা ডোনাল্ড দুই এই ক্যাসেল নিহত হন। পরের হাজার বছরের ইতিহাসে এই ক্যাসেলে অনেকবার যুদ্ধ হয়েছে, কখনো স্কটল্যান্ডের হাতছাড়া হয়ে ইংল্যান্ডের কবজায় গেছে, আবার পুনরুদ্ধারও হয়েছে বারবার। স্কটল্যান্ডের ইতিহাসের অনেক সমৃদ্ধ এবং দুঃখজনক অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে আজও টিকে আছে এই ক্যাসেল।
এলাকাটা মালভূমির মতো, পাহাড়ের খাড়া ঢাল সাগরতীরে গিয়ে মিলেছে। ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কনকনে বাতাস বইছে বলে বেশ ঠান্ডা লাগছে। সঙ্গে আমার ফুফাতো ভাই সুমন। পার্কিং এরিয়ার কফিশপ থেকে দুই ভাই দুটো কফি হাতে করে ক্যাসেলের মূল ফটকের উদ্দেশে রওনা হলাম। খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা নিচে নেমে আবার তার চেয়ে বেশি ওপরের দিকে উঠতে হয়। প্রবেশদ্বারের কাউন্টার থেকে জনপ্রতি সাড়ে ১০ পাউন্ডের টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে বেশ অল্প কয়েকজন দর্শনার্থীর দেখা মিলল।
ক্লিফের ওপর স্থাপিত ক্যাসেলটা একেবারেই ছোট। সবুজ ঘাসের গালিচা মাড়িয়ে প্রথমেই আমরা দরবার হলে প্রবেশ করলাম। দরবারটা আগের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, ছাদে সুন্দর কিছু কাজ চোখে পড়ল। চত্বরটায় বেশ কয়েকটা ছোট ভবন, বেশির ভাগ আধা ধসা, দু-তিনটা ছাড়া সবগুলোর ছাদ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। একে একে আমরা রাজা-রানির ব্যক্তিগত কক্ষ, ডাইনিং হল, কোয়ার্টার, অস্ত্রাগার, আস্তাবল ঘুরে দেখলাম। হুইগস ভল্ট নামের বন্দিশালাটা একটা টানেলের মতো। বন্দিশালার খোলা জানালা দিয়ে শোঁ শোঁ করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। সেখান দিয়ে নিচে তাকালে অনেক নিচে সাগরের পানি আছড়ে পড়তে দেখা যায়। ছোট্ট এই বন্দিশালায় গাদাগাদি করে শত শত যুদ্ধবন্দীকে রাখা হতো। জানালা দিয়ে পাহাড়ের কিনারা বেয়ে পালাতে গিয়ে সাগরে ডুবে অনেক বন্দীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার লড়াইয়ে ডুনোটার ক্যাসেল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধের ভিত্তি এবং নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করেছিল। তিন দিকে নর্দান সি বেষ্টিত অবস্থান এবং শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা এটিকে শত্রুর বিরুদ্ধে একটি আদর্শ দুর্গে পরিণত করেছিল।
বন্দিশালা থেকে বেরিয়ে খ্রিষ্টীয় উপাসনালয় চ্যাপেলে ঢুঁ মারলাম। শত বছরের পুরোনো চ্যাপেলটির ছাদ ছাড়া অন্য অংশ এখনো টিকে আছে। অনেকটা সময় নিয়ে মোটামুটি সবকটি কক্ষই ঘুরে দেখে নরম ঘাস মাড়িয়ে ওয়াচ টাওয়ারের দিকে হেঁটে গেলাম। একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। সমাধি এলাকায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। জায়গাটা খুব ছোট, কোনো সমাধিফলক নেই, পুরোটাই ঘাসে ঢাকা। কোনায় ছোট্ট একটা সাইনেজ দেওয়া রয়েছে। সমাধিস্থলের ওপর দিয়ে হেঁটে মূল ফটকের দিকে পা বাড়ালাম।
ততক্ষণে পশ্চিমে অনেকটা ঢলে পড়েছে সূর্য, তীব্র বাতাসে হাত জমে যাওয়ার দশা। মূল ফটক পেরোতেই কাউন্টারের মেয়েটা চিৎকার করে বলল, নিশ্চয়ই তোমরা এনজয় করেছ।
উত্তরে বললাম, নিশ্চয়…
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।