০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার, ১০:০৮ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
বন্ধু, প্রতিবেশী বা সহকর্মী শেয়ারবাজার থেকে ভালো মুনাফা করছেন। সেটি দেখেই সিংহভাগ সাধারণ মানুষ শেয়ারবাজারে আসে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, চাঙ্গা বাজারে অন্যের মুনাফার উদাহরণ সৃষ্টি হতে হতে সাধারণ মানুষের শেয়ারবাজারে আগমন অনেক দেরি হয়ে যায়। দেখাদেখি বিনিয়োগ করতে আসা এসব মানুষ নানা সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে। শেয়ার কেনাবেচার সময় খুব কম জনই দীর্ঘমেয়াদে নিজের আর্থিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে ভাবে। প্রায় কারোই নেই নির্দিষ্ট বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা কর্মকৌশল। বিক্ষিপ্ত কেনাবেচায় রবাহূত এ বিনিয়োগকারীরা কিছু মুনাফা করে দেখালেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লোকসান এড়াতে ব্যর্থ হয় তারা। অথচ একটু শিখে, বুঝে বিনিয়োগ করতে পারলে শেয়ারবাজার হয়ে উঠতে পারে তাদের সচ্ছলতার একটি বড় উৎস। নতুন বিনিয়োগকারীদের করণীয় সম্পর্কে কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে এ পর্বের মূল রচনা...
বলা হয়, দেশের শেয়ারবাজারকে বহু সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছে ১৯৯৬ ও ২০১০ সাল। শেয়ারদর ও সূচকে অস্বাভাবিক উত্থান এবং তারপর অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় দরপতনের দিনগুলোয় শত শত শিরোনাম হয় খবরের পাতাজুড়ে। দূরবর্তী কিছু একটা ভেবে যারা চিরকালই শেয়ারবাজারকে এড়িয়ে চলেন, তারাও সেসব সংবাদের পাঠক হন। তারা জানতে পারেন, এ বাজারে খুব কম সময়ে অনেক মানুষ বড় মুনাফা করে। আবার দরপতনের সময় সেখানে পুঁজি টিকিয়ে রাখাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
উত্থান-পতনের চক্রাকার পথচলায় শেয়ারবাজার আবারো চাঙ্গা হতে শুরু করে। লোকসান কাটিয়ে উঠতে থাকায় সেখানে অনেক বিনিয়োগকারী আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা শেয়ারগুলো যেমন তাদের পোর্টফোলিওর সম্পদমূল্য বাড়াতে থাকে, আবার স্বল্পমেয়াদে কেনাবেচা করেও অনেকে মুনাফা করতে থাকেন। উত্থান পর্বে মুনাফার গল্পগুলোও আবার পারিবারিক-সামাজিক জীবনে অন্যদের মুখে মুখে ছড়ায়। দূরে থাকা মানুষও ধীরে ধীরে শেয়ারবাজারের দিকে আকৃষ্ট হয়। গত ১০০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে এ চিত্রটিকে শেয়াবাজারের একটি বৈশ্বিক চেহারা বলা যেতে পারে।
দেশের শেয়ারবাজার বর্তমানে এমনই একটি পর্যায়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করছেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা। ধস-পরবর্তী সর্বনিম্ন স্তর থেকে কয়েক দফায় বেড়ে মুনাফার সুযোগ দিয়েছে প্রায় সব খাতের শেয়ার। পুরনো বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের টিমকে ঢেলে সাজাচ্ছে। ধারাবাহিক আইনি সংস্কারের মাধ্যমে আগামীর বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেও। অনেক নতুন বিনিয়োগকারীও প্রতি মাসে বিও হিসাব খুলছেন।
অভিজ্ঞরা বলছেন, নতুন হোক, আর পুরনো হোক, শেয়ারবাজারের এক্সপার্ট না হলে বিনিয়োগকারীদের উচিত রক্ষণশীল কৌশলে অনড় থাকা। নতুবা ঝুঁকি এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হবেন না তাদের একটি বড় অংশ।
বিশ্বের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত নামকরা প্রকাশনাগুলোয় নবাগত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ডু’জ অ্যান্ড ডোন্ট’স নিয়ে অনেক লেখা ছাপা হয়। সেগুলোর আলোকে দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাথমিক দিকনির্দশনাগুলো এমন—
পড়ুন, শিখুন, জানুন
পরিচিত একজন অন্যের কথা শুনে মুনাফা করছে— তা দেখে আপনিও সে পথে হাঁটবেন না। বরং নিজে বোঝার চেষ্টা শুরু করুন এবং সেটি আজ থেকেই। শেয়ারবাজার কী এবং কেন, সেটি কীভাবে কাজ করে, সেখানে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর প্রকৃতি, নেপথ্যে থাকা কোম্পানির ব্যবসার ভালো-মন্দ, কী দামে কিনলে আপনি ঠকবেন না, কোন ধরনের ঘটনাপ্রবাহে শেয়ারের দাম কীভাবে প্রভাবিত হয়, কোন বিনিয়োগে রিটার্ন কেমন আর তার বিপরীতে ঝুঁকি কতটা— এর সবই বিনিয়োগ শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ। বই পড়ে, সংবাদমাধ্যম বা বিনিয়োগ শিক্ষার বিভিন্ন পোর্টালে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে এগুলো জানার সুযোগ রয়েছে। এর চেয়েও সহজ অপশন হলো, দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ একাডেমির কোর্সগুলোয় অংশ নেয়া। সেখানে খুব সহজে অত্যাবশ্যক মৌলিক ধারণাগুলো পাওয়া সম্ভব।
বিনিয়োগ শিক্ষার তিনটি মূল অংশ। প্রথমটি মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ সম্পর্কিত। দ্বিতীয় অংশটি বাজারের আচরণ তথা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, যেখানে দরের নড়াচড়া সম্পর্কিত নানা বিষয় থাকে। তৃতীয় অংশে থাকে বিনিয়োগকারীর অ্যাডভান্সড লেভেলের দর্শন-কৌশল সম্পর্কিত আলোচনা। যথাযথ মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতিও এর একটি বড় অংশ। এর যেকোনো একটিতে দুর্বলতাও সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।
পেশাদারদের হাত ধরে শুরু করুন
নিয়ন্ত্রক সংস্থার লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। সম্পদ ব্যবস্থাপকরা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। তারা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রেখে বছর বছর একটি প্রত্যাশিত রিটার্ন জেনারেট করে সেখান থেকে লভ্যাংশ দেয়ার চেষ্টা করেন। সারা বিশ্বেই নবাগত বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেয়া হয় মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করুন। এর সপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো, আপনি প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা স্টাডি করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানার এবং বোঝার চেষ্টা শুরু করলেও একটি অবস্থানে আসতে আপনার কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। অন্তত এ সময়টুকু কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নেবেন না।
দেশের পুঁজিবাজারে এখন দুই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। প্রায় প্রতিটির দামই সেগুলোর সম্পদমূল্যের চেয়ে অনেক কম। অবসায়নকালে প্রক্রিয়াগত কিছু খরচ বাদ দিয়ে আপনি সম্পদমূল্যেই ইউনিটগুলোর দাম ফেরত পাবেন। এর সঙ্গে বছর বছর দেয়া লভ্যাংশও যোগ হতে পারে। অন্যদিকে বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিট স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় না। তবে সম্পদমূল্যে সেগুলোর ইউনিট সম্পদ ব্যবস্থাপকের অফিস বা অনুমোদিত বিক্রয় প্রতিনিধির অফিস থেকে কেনাবেচা করা যায়।
এখানে সম্পদ ব্যবস্থাপকের দক্ষতা, ইউনিটহোল্ডারের প্রতি কমিটমেন্টের ট্র্যাক রেকর্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্ববর্তী বছরগুলোয় এনএভি রিটার্ন, ইউনিটপ্রতি আয়, লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা আগামীতে সে সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে আপনার সম্ভাব্য প্রাপ্তির ব্যাপারে কিছুটা হলেও ধারণা দেবে। ভালো ফান্ড ম্যানেজাররা দীর্ঘমেয়াদে সূচকের চেয়ে বেশি রিটার্ন এনে দেন তাদের গ্রাহকদের। না বুঝে আগ্রাসী হয়ে লোকসান করার চেয়ে গড়পড়তা এ ঝুঁকি সমন্বিত মুনাফা অনেক ভালো।
বাজারের সঙ্গে ব্যবহারিক পরিচিতির এ পর্বে মুনাফার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে, সক্রিয়তা ও সংযুক্তির সঙ্গে শেখা। মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ধরে রাখা, এগুলোর সম্পদমূল্যের সঙ্গে বাজারমূল্যের সম্পর্ক, ফান্ড ম্যানেজারের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার কৌশল পর্যবেক্ষণ একজন বিনিয়োগকারীকে ‘নিজে করা’র জন্য প্রস্তুত করে।
তথ্যের উৎস: দক্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মূল বিষয় তথ্য। যে যত আগে যত নির্ভুল তথ্য পান এবং সেগুলোর যথার্থ বিশ্লেষণ করেন— শেয়ারবাজারে তার সাফল্যের সম্ভাবনা তত বাড়ে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, করপোরেট সুশাসনের দুর্বলতায় মূল্যসংবেদনশীল ও বিশ্লেষণে সহায়ক অন্যান্য তথ্য সাধারণ মানুষের গোচরে আসার আগেই শেয়ারদরে প্রত্যাশিত পরিবর্তনটির একটি বড় অংশ সম্পন্ন হয়ে যায়, বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে হিসাব মানদণ্ড মেনে কোম্পানির প্রদর্শিত উপাত্তগুলোর বিশ্লেষণও ভালো কোম্পানি চেনায় সহায়ক হতে পারে। এর বাইরে তথ্যের উৎস হিসেবে কোম্পানির অন্যান্য প্রেজেন্টেশন, ইন্ডাস্ট্রি জার্নাল, বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নিজে শুরুর আগেই কিছু বিষয় মনে গেঁথে নিন...
বিনিয়োগ না ট্রেডিং— প্রথমেই বিনিয়োগ আর ট্রেডিংকে আলাদা করতে হবে। বিনিয়োগ করার অর্থ হলো একটি সম্পদের মালিক হওয়া এবং যৌক্তিক সময় পর্যন্ত সেটি ধারণ করা। এক্ষেত্রে কিসের মালিক হচ্ছি, সেটি সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এজন্য মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ করতে হয়। অন্যদিকে বাজারে একটি শেয়ারের চাহিদা আর সরবরাহের তারতম্য এবং এর ফলে দরের হ্রাস-বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে কিছু মুনাফা করে নেয়াকে বলা হয় ট্রেডিং। এজন্য করতে হয় টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ। সেখানে মৌলভিত্তির চেয়ে শেয়ারের চাহিদা-সরবরাহ এবং দামের হ্রাস-বৃদ্ধির অন্য নিয়ামকগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাফ বা চার্ট ও বিভিন্ন টেকনিক্যাল নির্দেশকে এগুলো প্রতিফলিত হয়। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের ওপরও ইংরেজি ভাষায় অনেক বই লেখা হয়েছে। বাংলায়ও অনেক টিউটোরিয়াল প্রকাশ হচ্ছে।
ধীরে চলার মানসিকতা— পশ্চিমা প্রবাদে বলা হয়, শেয়ারবাজারে লোভ, ভয় আর গতি— এ তিন জিনিসকে এড়িয়ে চলতে হবে। নতুন বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সম্ভবত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বড় মুনাফা করার মানসিকতা।
নিজে বিনিয়োগ শুরুর আগেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে, এফডিআরের মতো বিকল্পগুলোর সমান রিটার্ন পেলেও আমি সন্তুষ্ট থাকব। বাজারে এমন অনেক শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, যেগুলোর লভ্যাংশের ইল্ড আর গড় বার্ষিক মূলধনি মুনাফার সম্মিলিত রিটার্ন এফডিআরের চেয়ে বেশি। বর্তমান মৌলভিত্তিও বাজারদরকে জাস্টিফাই করে।
খুব কম সময়ে বড় মুনাফার জন্য কেনা শেয়ারগুলোয় ঠিক উল্টোটা হওয়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি। বাজারে অনেক শেয়ার আছে, যেগুলোর দর খুবই অস্থিতিশীল। ছোট মূলধনি বহু কোম্পানির শেয়ারদর এক বছরে সাত-আট গুণ হয়ে যাওয়ার উদাহরণ দেখা যায় বাজারে। বিশ্লেষকরা নতুন বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। কারণ পরিসংখ্যান বলে, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা অতিমূল্যায়নের পর সেসব শেয়ার কেনেন এবং সংশোধন পর্বে তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হন। মৌলভিত্তি ও টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে ধারাবাহিক সফলতার আগে এমন শেয়ারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা ভালো, যেগুলো কোনো কারণে সেকেন্ডারি বাজারে হতাশ করলেও দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখলে আপনার মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম। কাগজে-কলমে বিশ্লেষণের সময় মনে হয়, অস্থিতিশীল শেয়ারেই বেশি মুনাফা করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এগুলো কেনার আর বেচার সঠিক সময় অনুধাবনে ট্রেডিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হয়। তার চেয়ে যৌক্তিক পিই অনুপাতে বড় মূলধনি ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদে অপেক্ষা করা ভালো।
শৃঙ্খলা: সঙ্গী বিনিয়োগকারীদের মতামত বা বাজারের পরিস্থিতিতে একটু পরিবর্তন দেখলেই নিজের কৌশল পাল্টে ফেলার মানসিকতা শেয়ারবাজারে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। ধরুন আপনি একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার তিন-পাঁচ বছরের জন্য কিনেছেন। বাজারে টানা তিন-চার মাস ধরে এর দর প্রায় স্থির অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে অনেক দুর্বল শেয়ারের দর দ্বিগুণ হয়ে গেছে। হঠাৎ আপনি নিজের সব শেয়ার বেচে সেগুলো কিনে বসলেন। আপনি কি নিশ্চিত, এখন আপনার মৌলভিত্তিক শেয়ারগুলোর দরবৃদ্ধির এবং অতিমূল্যায়িতগুলোর দর সংশোধনের পালা নয়?
অনিশ্চয়তা ও সতর্কতা: শেয়ারবাজার লাখো মানুষের অ্যাকশনের ফল। ইতিহাস বলে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সামষ্টিক রেসপন্সের কিছু কমন ধরন রয়েছে। এগুলো অনুসরণ করলেও ভালো মুনাফা করা যায়। তবে পরবর্তী ইভেন্টে সেখান থেকে বিচ্যুতির আশঙ্কাটি উড়িয়ে দেয়াও ভুল হবে। ওয়াল স্ট্রিটে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, ‘আনসার্টেইনিটি ইটসেলফ ইজ দ্য সার্টেইনিটি অব মার্কেটপ্লেস’।
নিজে বিনিয়োগ শুরুর পর...
ছোট আকারে শুরু করুন: শেয়ারবাজারে অধ্যয়ন, শৃঙ্খলা ও অভিজ্ঞতা— এ তিনের সমন্বয়ে ব্যর্থতা এড়াতে পারেন যেকোনো ব্যক্তি। অন্যগুলোয় যথেষ্ট নম্বর পাওয়ার পরও শেয়ারবাজারে নতুন হলে, আপনাকে অবশ্যই তৃতীয় পয়েন্টে নিজের দুর্বলতার কথা মনে রাখতে হবে। তাই প্রথমে রক্ষণশীল অবস্থান নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এক নম্বর করণীয় হলো, বিনিয়োগ সক্ষমতার সবটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে না। সাফল্য ও অভিজ্ঞতার সমান্তরালে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। পূর্ববর্তী মুনাফার টাকায় আপনি আগামীর সম্ভাব্য লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। অন্তত প্রারম্ভিক পুঁজিতে টান পড়বে না।
টাইমিং: বিনিয়োগ বলুন আর ট্রেডিং বলুন, কখন কিনতে হবে, কখন ধরে রাখতে হবে আর কখন বেচে দিতে হবে— এ সময়গুলো সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দরকার। তবে বাস্তবতা হলো, টাইমিংয়ের চেষ্টা করা যায় মাত্র, সেখানে পারফেকশনের কোনো সুনিশ্চিত কৌশল এখনো আবিষ্কার হয়নি। অভিজ্ঞরাও টাইমিংয়ে পূর্ণ সাফল্য আশা করেন না। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, নতুনদের জন্য শেয়ারবাজারে সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো, তুলনামূলক নিরাপদ দামে সম্ভাবনাময় কোম্পানির শেয়ার কিনে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য তা ধরে রাখা। সেরা টাইমিং কিংবা বিকল্প সুযোগগুলো হাতছাড়া করা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এ সময়টায় জ্ঞানার্জন, বিশ্লেষণ ও সঠিক মানসিকতা গঠন করার ওপর গুরুত্ব দিলে শেষ হাসিটা তিনিই হাসবেন। একদিন তিনি শিখে যাবেন, কোন শেয়ারটি জীবনেও বেচা যাবে না, কোনটি কখনো কেনাই যাবে না। তিনি আরো শিখবেন, কখন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কখন মুনাফা তুলে নিতে হবে।
শিক্ষা আজীবনের: ‘নাথিং নিউ আন্ডার দ্য সেইম সান।’ শেয়ারবাজারের কিছু সত্য গণিতের মতো স্বতঃসিদ্ধ। আশির দশকের ফর্মুলা বর্তমান বাজারেও সমানভাবে কার্যকর, আগামীতেও থাকবে। তার পরও দেখা যায়, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে খুঁটিনাটি নানা পরিবর্তনের কারণে বাজারের আচরণ ও বিনিয়োগকারীদের কৌশলে নতুন নতুন দিক উঠে আসছে। সফল বিনিয়োগকারীরা আমৃত্যু সেগুলোর অনুসন্ধানে থাকেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।