
পাবনার বেড়া পৌরসভাধীন পায়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পাঁচ জোড়া যমজ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। একই শ্রেণিতে পড়ছে তিন জোড়া শিক্ষার্থী। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে বেড়া পৌরসভার পায়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। উপজেলা জুড়েই স্কুলটির নামডাক আছে। প্রতি বছর ভালো ফলাফলের সুনামও রয়েছে স্কুলটির। তবে এবার স্কুলটির নাম ছড়িয়েছে ভিন্ন কারণে। স্কুলটিতে এখন পাঁচ জোড়া যমজ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
প্রথম শ্রেণিতে তিন জোড়া, তৃতীয় শ্রেণিতে এক জোড়া, চর্তুথ শ্রেণিতে এক জোড়া ভাইবোন লেখাপড়া করছে। প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে তৌহিদ-তানমিন, লামিয়া-ছামিয়া ও হাবিবা-হাফসা। তৃতীয় শ্রেণিতে আইরিন-আরিফা, চতুর্থ শ্রেণিতে আয়শা-মরিয়ম পড়াশোনা করে।
স্কুলের শিক্ষকরা জানান, কয়েকটি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে পাঁচ জোড়া যমজ ভাইবোন। একসঙ্গেই তারা স্কুলে যাওয়া আসা করে। এদের পোশাকও প্রায় সময় একই থাকে। হঠাৎ দেখে চেনার উপায় নেই কে বড় কে ছোট। এসব শিক্ষার্থীকে স্কুলে একটু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। পড়াশোনা, স্কুলে আসা যাওয়া সব বিষয়ে নিয়মিত নজর রাখা হয়। স্কুলে যেমন তারা নম্র-ভদ্র হয়ে থেকে তেমনি বাড়িতেও তারা মিলেমিশে পড়াশোনা করে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া যমজ ছেলে তৌহিদ-তানমিনের মধ্যে তৌহিদ বলে, বড় হয়ে সরকারি অফিসার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করব। দেশের মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাব। দিনমজুর সোহেল রানার যমজ কন্যা একই ক্লাসের লামিয়া-ছামিয়া দুজনই ডাক্তার হয়ে অসহায় বাবা-মাসহ অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে চায়।
পায়না মহল্লার ইব্রাহিমের যমজ কন্যা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা-হাফসা বলে, আমরা সব সময় একসঙ্গে থাকি। পড়াশোনা থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়া আসা একই সঙ্গে করে থাকি। আমরা দুজন কখনো ঝগড়া করি না। মিলেমিশে থাকি। জামা-কাপড়ও একই রঙের পরে থাকি।
শ্রমিক আরিফ হোসেনের যমজ কন্যা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন-আরিফা বলে, আমরা বড় হয়ে স্কুলের শিক্ষক হতে চাই। আমাদের স্যারেরা যেভাবে পড়াশোনা করায় আমরাও একদিন ছোটদের পড়াবো।
পায়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাক হোসেন ও লতিফা পারভীন বলেন, `যমজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করার আনন্দটাও আলাদা। তবে তাদের শনাক্ত করতে কিছু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তারা সব সময় একসঙ্গে বসে। তবে কোনো কিছু নিয়ে বিবাদ হলে তারা আলাদা বসে। এতে আমরা বুঝতে পারি দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে।`
পায়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. কামরুন্নাহার বলেন, `যমজ এই শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনার মধ্যে রাখতে পারলে তারাও দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। আমরা স্কুলের সকল শিক্ষার্থীকে এক নজরে দেখি। ধনী-গরিব সবাই আমাদের কাছে সমান। আমরা চাই আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী মানুষের মতো মানুষ হয়ে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করুক। দেশ ও জনগণের সেবায় বেড়িয়ে পড়ুক।`
বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, `বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। কারণ একই স্কুলে ১০ জন ভাইবোন পড়াশুনা করে। এসব শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে পড়াশোনা করানো ও সঠিক তদারকি করতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।`
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী বলেন, `এটি আমারও নজরে এসেছে। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্কুলে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে তদারকি করতে বলেছি। একটি স্কুলে ১০ জন ভাইবোন পড়াশুনা করে বিষয়টি খুবই চমৎকার। এটি আনন্দের বিষয়ও বটে। তবে ঘটনাটা বিরল। সচরাচর স্কুলগুলোতে এমন দেখা মেলে না।`
শেয়ার বিজনেস24.কম