২৮ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার, ১০:৪২ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
বলা হয়ে থাকে, অপশন্স মার্কেটে ৯৫ ভাগ সময় ব্যক্তিবিনিয়োগকারীরা পরাজিত হন। কারণগুলোও সহজেই বোধগম্য। তবে প্রতিষ্ঠান হলেই যে ৯৫ শতাংশ লেনদেনে মুনাফা করা যাবে— তেমনটিও নয়। ব্যক্তি হোক আর প্রতিষ্ঠান হোক, অপশন্স বাজারে ভালো করতে হলে চাই উচ্চমাত্রার দক্ষতা ও বিচক্ষণতা। একদিকে পোর্টফোলিওর জন্য প্রচুর অপশন আর উচ্চমাত্রার ফ্লেক্সিবিলিটি, অন্যদিকে উচ্চহারে রিটার্নের সুযোগ থাকায় বিশ্বের সব বাজারেই অপশন্সের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জটিলতর পরিস্থিতিতে সঠিক চালটি দিতে পারলে এ যুগে বড় বড় মুনাফার সুযোগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নিজের যোগ্যতা আর সাফল্যের সুবাদে অর্ধশতাব্দীর পথচলায় শতাধিক ব্যক্তি অপশন্স বাজারের হল অব ফেমে নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে ইতিহাসের সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফোরেক্স ইনফো
পল টিউডর জোনস জুনিয়র
(১৯৫৪)
মার্কিন হেজ ফান্ড ম্যানেজার
বিনিয়োগের ইতিহাসে সর্বকালের সেরাদের একজন টিউডর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন আর রবিন হুড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পল টিউডর জোনস জুনিয়র। ১৯৮৭ সালের অক্টোবরের ধসের আগে শেয়ারবাজারে শর্টসেল দিয়ে ওয়াল স্ট্রিটে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ভদ্রলোক। মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধসের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে আছে— ঘোষণা দিয়ে তিনি বলছিলেন, বাজার নামতে থাকলে পোর্টফোলিও বীমা হিসেবে বিনিয়োগকারীরা পুট অপশনগুলো কাজে লাগাবেন। অর্থাৎ পোর্টফোলিওর ভ্যালু কমে যেতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা পুট অপশন্সের বিক্রেতাদের কাছে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে পোর্টফোলিওর শেয়ার বা ইনডেক্স বিক্রি করে দেবেন। তখন পুট অপশনগুলোর বিক্রেতাদের লোকসান অনেক বেড়ে যেতে পারে।
ব্ল্যাক মানডের পূর্বানুমান করে জোনস অপশন্স বাজারে বড় আকারের শর্টসেল দিয়ে রেখেছিলেন। ধসের ভয়াবহতায় ওয়াল স্ট্রিট যখন কাঁপছিল, শর্ট পজিশনগুলো তখন জোনসের পুঁজি তিন গুণে উন্নীত করে। অপশন্স বাজারের ইতিহাসে সেরা সাফল্যগুলোর একটি।
২০১৭ সালে ফোর্বস জানায়, ১২ বিলিয়ন ডলারের হেজ ফান্ড ম্যানেজ করা পল টিউডর জোনসের নিজ সম্পদের মূল্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের ১২০তম ধনী।
জর্জ সরোস
(১৯৩০)
মার্কিন বিনিয়োগকারী ও লেখক
বিনিয়োগের বিশ্বকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করা কিছু বইয়ের লেখক জর্জ সরোস ইতিহাসের সেরা বিনিয়োগকারীদের একজন। একজন বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে সারা পৃথিবীতে ঘটতে থাকা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণে মুনশিয়ানার পরিচয় দেয়া এ ভদ্রলোক সময়ে সময়ে অনেক সংকট ও সুযোগের পূর্বাভাস দিয়েছেন। বাজারগুলোর সবচেয়ে বড় মজা হলো, এ সংকটও আপনার জন্য বড় সুযোগ হয়ে আসতে পারে, যদি আপনি এর স্বরূপ বুঝে বাজারে সঠিক পজিশনগুলো নিতে পারেন।
বলা হয়, জর্জ সরোস একাই ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে নাজুক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছেন। ইউরোর সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাবল প্রতিটি বড় ঘটনাতেই সরোস অপশন্স বাজারে বিভিন্নভাবে সক্রিয় ছিলেন। প্রায় প্রতিটিতেই তিনি বড় বড় মুনাফা গুনেছেন। বলা হচ্ছে, এখনো ওয়াল স্ট্রিটের চলমান উত্থান, ক্রমবর্ধমান ভলাটিলিটি আর দরপতনের ঝুঁকিকে অপশন্সের নানা বিপরীতধর্মী পজিশনে এমনভাবে আপন করে নিয়েছেন যে, যাই ঘটুক জর্জ সরোসের কিছুই হবে না।
এক জীবনে নিজের হাতে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছেন মানবদরদি এ বিনিয়োগকারী।
অ্যান্ডি ক্রেগার
(১৯৫৫)
মার্কিন কারেন্সি ডিলার
খুব বেশি মানুষ তার সম্পর্কে জানে না। সংস্কৃত আর দর্শনে স্নাতক ক্রেগার বিজনেস স্কুলে এক চক্কর দিয়ে ব্যাংকার হিসেবে কাজ করছিলেন। আশির দশকে ব্যাংকার্স ট্রাস্টে থাকাকালে আগ্রাসী কারেন্সি ডিলার হিসেবে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি পেতে থাকেন। ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টও বেশ ইমপ্রেসড। অন্য ডিলারদের যেখানে ৫ কোটি ডলারের তহবিল দেয়া হচ্ছিল, ৩২ বছর বয়সী ক্রেগারের ম্যানেজমেন্ট তার হাতে তুলে দিল ৭০ কোটি ডলার।
১৯৮৭ সালের অক্টোবরে ব্ল্যাক মানডের পর বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাগুলোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম শুধুই কমছিল। বিনিয়োগকারীরাও সেদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। ক্রেগার বিশ্বাস করতেন, সবগুলো বিদেশী মুদ্রাই এত শক্তিশালী নয়। তিনি খুঁজে বের করলেন নিউজিল্যান্ডের ডলার, বাজারে যেটিকে কিউই বলা হয়। ৪০০ গুণ লিভারেজ নিয়ে ক্রেগার তার ফান্ড (এরই মধ্যে অন্যদের চেয়ে বড়) নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন কিউইর ওপর। কিউই অপশনগুলোয় তিনি এত বড় বড় শর্ট পজিশন নিতে থাকলেন যে, তার সেল অর্ডারগুলো ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রাটির ব্যবহারিক লিকুইডিটিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে কথিত আছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডলারের বিপরীতে ৫ শতাংশ পড়ে যায় কিউই। ক্রেগারের কোম্পানির মুনাফা হয় ৩০ কোটি ডলার। কারিগর হিসেবে তিনি বড় বোনাস পান। অপশন্স বাজারে, বিশেষ করে কারেন্সি অপশনগুলোয় অনেক বড় বড় মুনাফা করে ইতিহাসের সেরাদের তালিকায় ঢুকে গেছেন অ্যান্ডি ক্রেগার। নাম শুনে পশ্চিমের প্রসিদ্ধ উচ্চারণ প্রশিক্ষক অ্যান্ডি ক্রেগারের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেলে অনেক সাধারণ মানুষ।
এডওয়ার্ড ও. থর্প
(১৯৩২)
গণিতের অধ্যাপক ও মার্কিন হেজ ফান্ড ম্যানেজার
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ও. থর্প তার গণিত পরিসংখ্যানের জ্ঞানকে আর্থিক বাজারে কাজে লাগিয়েছেন। সম্ভাব্যতার গণিতের ভিত্তিতে ট্রেডিং মডেল দাঁড় করানোয় অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে তার। অপশন্স থিওরির ওপর বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পেপার উপস্থাপন করার পাশাপাশি ফান্ড ম্যানেজার হিসেবেও ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করে গেছেন তিনি। অপশন্স বাজার তাকে শুধু তাত্ত্বিক অবদানের জন্যই মনে রাখবে— এমনটি ভাবলে ভুল করবেন। পারফরম্যান্সের কারণেই তিনি অপশন্স ইতিহাসের সেরা পাঁচে উঠে আসেন।
ব্লেয়ার হাল
(১৯৪২)
মার্কিন বিনিয়োগকারী ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক
বিলিয়ন ডলারের ট্রেডিংয়ের জন্য কোয়ান্টিটেটিভ মডেল দাঁড় করানোর কাজ করে গেছেন ব্লেয়ার হাল। অপশন্স বাজারেও তিনি ইতিহাসের সেরা গুরুদের একজন। স্টক, কমোডিটি, কারেন্সিসহ সব ধরনের অপশন্সেই অনেক মুনাফা করেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে নিজের গড়া ইলেকট্রনিক ট্রেডিং সিস্টেম কোম্পানিটি গোল্ডম্যান স্যাকসের কাছে বিক্রি করে দিয়ে ৫৩ কোটি ডলার পান ভদ্রলোক।
এক পর্যায়ে ডেমোক্র্যাট রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে ইলিনয়ের প্রাইমারিতে বারাক ওবামার কাছে হেরে যান।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।