০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার, ০২:৫১ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
মেডিকেল ডিভাইস বা সার্জিক্যাল পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমদানিকৃত এসব মেডিকেল পণ্যের খালাস বন্ধ করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরে আটকে আছে হাজার কোটি টাকার পণ্য। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। তখন আর জটিলতা থাকবে না।
জানা গেছে, আগে নয় ধরনের মেডিকেল ডিভাইস দেখভাল করত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত বছর ঔষধ প্রশাসন মেডিকেল ডিভাইসের একটি গাইডলাইন তৈরি করে। এতে প্রায় চার হাজারের অধিক পণ্য আওতাভুক্ত করা হয়। এগুলোকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়। রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোনো পণ্য যাতে বন্দর থেকে খালাস করতে না পারে, সেজন্য গত ১৩ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এতে দেশের সব বন্দরে মেডিকেল ডিভাইস, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রি-এজেন্ট ও সার্জিক্যাল পণ্য আটকে যায়।
এদিকে দ্রুত পণ্য খালাস ও গাইডলাইন বাতিলের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী দোকানপাট বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি মানা না হলে তারা আরো কঠোর আন্দোলনে যাবেন। প্রয়োজনে দোকানপাট লাগাতার বন্ধ রেখে আন্দোলন করবেন। অন্যদিকে গত টানা দুদিন সার্জিক্যাল ও মেডিকেল যন্ত্রপাতির দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবহারকারীরা বিপাকে পড়েছেন। অচিরেই এ ধর্মঘট শেষ না হলে দেশ বিরাট সংকটে পড়বে। স্বাস্থ্যের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধের পাশাপাশি রোগীর অস্ত্রোপচারও বন্ধ হয়ে যাবে।
গত বছরের ১০ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন-বিষয়ক এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ উত্পাদন হয়, এমন মেডিসিন বা মেডিকেল ডিভাইস আমদানি নিরুত্সাহিত করার জন্য ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেশে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানোলা, ইনফিউশন সেট, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, সাকসেশন ক্যাথেটার ও ডিসপোজেবল ফিডিং টিউব আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে সংকট বেড়ে গিয়ে দামও বেড়েছে অনেকখানি। মাত্র ৩০ টাকার ফিডিং টিউব বর্তমানে বাজারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইস খালাসের বিষয় নিয়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) গিয়েছিলেন। সেখান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের শিগগিরই একটি ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস-বিষয়ক গ্যাজেট প্রকাশের কথা রয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে কয়েক দিনের সময় চেয়েছে এনবিআর। অথচ প্রচলিত আমদানি নীতি আদেশেও মেডিকেল ডিভাইস আনার বিষয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, যেসব মেডিকেল ডিভাইস মানুষের শরীরে সরাসরি ব্যবহার হয় না, সেগুলোকে ঔষধ প্রশাসনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে ব্লাড পেসার মেশিন, ডায়বেটিস মাপার মেশিন, হুইলচেয়ার, ইউরিন কনটেইনারসহ বিভিন্ন পণ্য। ওষুধ প্রশাসন যে গাইডলাইন তৈরি করেছে, তা ১৯৪০ সালের ঔষধ আইনের ৩-এর (বি) ধারার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে জানান তারা।
সার্জিক্যাল পণ্য আমদানিকারকরা জানান, সরকার একদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির স্লোগান দেবে, অন্যদিকে আমদানিযোগ্য পণ্য দেশে আনতে বাধা দেবে, এটি চলতে পারে না। যদিও এসব এসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে তাদের জানানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, দেশের আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের মান দেখার মতো কোনো সংস্থা ছিল না। দেশের মানুষকে মানসম্মত মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দেশের অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে, যাতে মানুষ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পায়। এজন্য জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।-বণিক বার্তা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।