১৪ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার, ১১:৩৮ এএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
ফাইল ছবি |
সিলেটের ৪২ জন যাত্রী বিয়ের দাওয়াতে কানাডা যাচ্ছিলেন। তাদের পাসপোর্টে দেশটির ভিসাও ছিল। বিয়েতে অংশ নেওয়া শেষে দেশে ফিরতে ছিল ফিরতি ফ্লাইটের টিকিটও। কিন্তু সিলেট থেকে ঢাকায় আসার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের কর্মীরা তাদের বোর্ডিং না দিয়ে কানাডা যাত্রা আটকে দেয়। এ ঘটনায় সিলেট ও কানাডায় নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
জানা গেছে, ১০ নভেম্বর সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন ৪২ জন যাত্রী। সিলেট থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কানেক্টিং ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন ওই্ যাত্রীরা। বিমানের চেক ইন কাউন্টারের কর্মীরা দেখতে পান ৪২ জন একই ধরনের আমন্ত্রণে কানাডা যাচ্ছেন। তবে সিলেটি ৪২ যাত্রীর কারও হোটেল বুকিং ছিল না। তারা সম্মিলিতভাবে সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছে। হোটেল বুকিং না করে কেন বাসা ভাড়া করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে একেক জন যাত্রী একেক রকমের উত্তর দিয়েছেন। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় বিমান বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর ও দিল্লিতে কানাডার ভিসা অফিসে ই-মেইল পাঠিয়ে যাচাই করে। সে সময় যাত্রীদের জানানো হয়, কানাডা কর্তৃপক্ষ তাদের যাওয়ার অনুমতি দিলেই ফ্লাইটে যেতে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, যাত্রীদের ট্রাভেল ডকুমেন্টসে নানা রকম অসঙ্গতি ছিল। তাই সন্দেহ হওয়ায় বিমানের পক্ষ থেকে কানাডা কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল করা হয়। পরবর্তী সময়ে কানাডা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ওই যাত্রীরা প্রতারণা করে ভিসা নিয়েছেন।
তবে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটের প্রবাসীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিমানের সমালোচনা করে নানারকম মন্তব্য করছেন তারা। তাদের অভিযোগ সঠিক কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন, রিটার্ন টিকিটও কেটেছেন। অথচ বিমানের কর্মকর্তারা তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেতে দেয়নি। এতে যাত্রীরা সামাজিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একইসঙ্গে রিটার্ন টিকিটের টাকাসহ নানাভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের তথ্য ভুয়া হয়ে থাকলে কানাডা ভিসা দিতো না, আর যদি আটকাতেই হয় কানাডার ইমিগ্রেশন আটকাবে। বিমান কেন আটকাবে? এই যাত্রীদের হয়ে অনেকেই আদালতে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের হুমকিও দিচ্ছেন।
জানা যায়, মূলত কানাডায় পাঠাতে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র বানিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি। সেখানে পৌঁছে অনেকেই শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় চায়। কেউ আবার গোপানে কাজ করা শুরু করেন। এই ৪২ জনকে কনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমন্ত্রণপত্র বানিয়ে দেয় ট্রাভেল এজেন্সি। মূলত সিলেট ও কানাডার একটি সিন্ডিকেট ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে মানুষকে কানাডা পাঠানোর বাণিজ্য করে আসছে। বাস্তবে কানাডায় এ ধরনের কোনও বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না। কানাডা পৌছানোর জন্য জন প্রতি ১২ থেকে ১৮ লাখ টাকা চুক্তি করে এসব এজেন্সি। এই ৪২ জন যাত্রী যে বিয়ের আমন্ত্রণ দেখিয়ে ভিসা নিয়েছিলেন, সেই একই বিয়ের আমন্ত্রণে আরও অনেকে কানাডা গিয়েছেন। অক্টোবরের মাসেই দুই দফায় ৩৩ জন কানাডায় গিয়েছেন। ‘ইমিগ্রেশন কন্ট্রাক্ট’ করে সহজে পার হতে তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিলেট-ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইটের টিকেট কাটেন। সিলেটের ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন করতে সক্ষম হন তারা।
বিমানের সিইও শফিউল আজিম বলেন, প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা যাত্রীদের জানিয়েছি, তাদের কানাডায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এ ধরনের যাত্রীদের কানাডায় নিয়ে গেলে বিমানকেই বড় অংকের জরিমানা দিতে হতো। কানাডায় বিমানের সুনাম নষ্ট হতো।
বিমান জানিয়েছে, ভুয়া কাগজপত্রে কোনও যাত্রী বহন করলে কানাডা ইমিগ্রেশন আটকে দিতো আর। যাত্রী প্রতি এয়ারলাইনকে ১৮০০ ডলার জরিমানা দিতে হতো। এছাড়া ফ্লাইট বন্ধ কিংবা পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীরা অতিরিক্ত তল্লাশির বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।