facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার, ২০২৫

Walton

মানবাধিকারের সুরক্ষায় ন্যায়বিচার ও শান্তির দাবিতে বিশ্ব একতাবদ্ধ


১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার, ০৮:০০  পিএম

মোঃ নজরুল ইসলাম

শেয়ার বিজনেস24.কম


মানবাধিকারের সুরক্ষায় ন্যায়বিচার ও শান্তির দাবিতে বিশ্ব একতাবদ্ধ

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো মানবাধিকার। মানব ও অধিকারের সংমিশ্রণে গঠিত এই শব্দটি প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে মানবতার সংকটের চিত্র তুলে ধরে। যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও শোষণের মূল কারণ হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকেই দায়ী করা হয়। গাজায় নিহত শিশুটি, মিয়ানমারের উদ্বাস্তু মানুষ কিংবা ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগোষ্ঠী— এ সকল দৃশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিচ্ছবি।

যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন: এক নির্মম বাস্তবতা

যুদ্ধ কখনো মানবকল্যাণ বয়ে আনে না; বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস তৈরি করে। বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যার অন্যতম কারণ ভূ-রাজনৈতিক সংকট। পাশাপাশি বিশ্ব সম্পদের সুষম বণ্টন না হওয়ায় ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘনকেই নির্দেশ করে।

কী বোঝায় মানবাধিকার?

একজন মানুষের জন্মগত ও মৌলিক অধিকারকেই মানবাধিকার বলা হয়। অথচ, আজকের বিশ্বে ক্ষুধার অন্ন কেড়ে নেওয়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা কিংবা শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ ধারা থামাতে হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

মানবাধিকারের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইন

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (UDHR) প্রকাশ করে। এই দলিলের ৩০টি ধারা বিশ্বজুড়ে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রণীত। এছাড়া জাতিসংঘের ১১টি সনদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন হিসেবে কার্যকর রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক দেশেই এসব আইনের প্রয়োগ সীমিত।

নারীর মানবাধিকার: এখনো এক অসমাপ্ত সংগ্রাম

বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য আইন, চুক্তি ও আন্দোলন থাকলেও আজও নারীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। ১৯৯৫ সালে বেইজিং নারী সম্মেলনসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে, কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোতে নারীর অংশগ্রহণ আজও অনেক দেশে সীমিত।

মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও ন্যায়বিচার

মানবাধিকার রক্ষা শুধু রাষ্ট্রীয় আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রতিটি মানুষের মধ্যে নৈতিক সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাই প্রকৃত সমাধান। সমাজের সব স্তরে মানবাধিকারের চর্চা নিশ্চিত হলে তবেই একটি শোষণহীন, শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অতএব, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে ন্যায়বিচার, শিক্ষা ও সচেতনতার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়া, যাতে একটি সুন্দর ও কল্যাণময় বিশ্ব গড়ে ওঠে।

পরিসংখ্যান ও বাস্তব উদাহরণ:

মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা বোঝাতে কিছু নির্ভরযোগ্য তথ্য সংযুক্ত করা দরকার। উদাহরণস্বরূপ—

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ১০ কোটিরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে (UNHCR)।

  • অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়। এছাড়া, বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বিশেষ কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করলে পাঠকের কাছে বিষয়টি আরও বাস্তবসম্মত মনে হবে।

নাগরিকদের ভূমিকা:

রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকার পাশাপাশি সাধারণ নাগরিক কীভাবে মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে, তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে—

সচেতনতা বৃদ্ধি: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বই, সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে মানুষকে মানবাধিকারের গুরুত্ব বোঝানো।

অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া: যখনই কোথাও বৈষম্য বা নির্যাতন দেখা যায়, তখন তা প্রতিবাদ করা এবং আইনগত সহায়তা নেওয়া।

ভোটাধিকার প্রয়োগ: ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করা নেতাদের নির্বাচিত করা।

প্রযুক্তির ভূমিকা:

মানবাধিকার রক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—

স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট: অন্যায়ের প্রমাণ সংগ্রহ করে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।

সাইবার কর্মসূচি: অনলাইন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা।

অর্থনৈতিক বৈষম্যও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম একটি দিক। একটি বৃহদাংশ সম্পদ কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে দরিদ্র জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির মধ্য দিয়ে এই বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। তবে, মানবাধিকার যখন সুরক্ষিত হয়, তখন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির দিকে চলে যায়। একে অপরের অধিকার সম্মান করা, ভিন্ন ভিন্ন জনগণের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে, যা শেষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করে।

১৯৪৮ সালের বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা এ-ই বার্তা দেয় যে, “মানবাধিকার হলো প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার, যা জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য।” এর মাধ্যমে মানবাধিকার স্বীকৃত এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা বিশ্বব্যাপী চলছে। কিন্তু যখন মানুষের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়, তখন এই অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার সংরক্ষণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা জরুরি, যেখানে ব্যক্তি এবং সমাজের জন্য অর্থনৈতিক সমতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অধিকারও সমানভাবে নিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার ও অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। কেবলমাত্র মানবাধিকার রক্ষা করলেই একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বিশ্ব গঠন সম্ভব।

লেখক :

সম্পাদক, শেয়ারবিজনেস২৪ডটকম

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিশেষ প্রতিবেদন -এর সর্বশেষ