সুদের হার বাড়লেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই: ব্যবসায়ীদের গভর্নর

ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা মূলত মুনাফার ওপর নির্ভর করেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন, এবং বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ব্যক্তিগত সফরের সময় প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর এসব কথা বলেন। তিনি আরও জানান, জানুয়ারি মাসের প্রতিবেদন থেকে মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এর ভিত্তিতে সুদের হার বাড়ানো কিংবা না বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধি: প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা

দেশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১৫-১৬ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে।

তবে গভর্নর মনে করেন, সুদের হার, বাজারের চাহিদা, ডলারের দামসহ সব বিষয়কে সমন্বিতভাবে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, "অর্থনীতি ভালো না হলে ব্যবসার পরিবেশও ভালো থাকবে না। ধাপে ধাপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।"

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি জানান, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে, টাকার মান বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে।

চালের দাম ও আমদানির অবস্থা

বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়লেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো বলে উল্লেখ করেন গভর্নর। তিনি জানান, ভারতীয় বাজারে ভালো উৎপাদনের কারণে চাল আমদানি করতে গেলে দাম কিছুটা কম হতে পারে। এ বছর বাংলাদেশে ১৯-২০ লাখ টন চাল আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যাংক লুটপাট ও দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে ব্যাংক লুটপাটের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, "মামলা হয়েছে এবং বিদেশেও আইনি প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। তবে এ কাজ শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়, সরকারের অন্যান্য সংস্থাকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সমন্বয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যৌথ অনুসন্ধান দল গঠন করা প্রয়োজন।"

তিনি আরও জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং আমানতকারীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের এ বক্তব্য বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।