২০ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার, ১০:১২ এএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
সাফল্য অর্জন করতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। সততা, পরিশ্রম আর একাগ্রতা থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই কথাটিকেই যেন আবার প্রমাণ করলেন জ্যোতি। নিজের হাল না ছাড়া চেষ্টার বৈঠা বাইতে বাইতেই চলে গেলেন স্বপ্নের চূড়ায়। ছিলেন দিনমজুর।
মাত্র পাঁচ টাকার মজুরিতে সারাদিন কাজ করতেন তিনি। পেট ভরে খাবার জোটানো কঠিন ছিল তার জন্য। অথচ সেই জ্যোতি রেড্ডিই কঠোর পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে আজ কোটিপতি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে ভারতের তেলঙ্গানার দরিদ্র পরিবারে জন্ম জ্যোতির। পাঁচ ভাইবোনের সংসারে ঠিকমতো খাবারও জুটত না জ্যোতির। তাই তাদের দুই বোনকে এতিমখানায় রেখে এসেছিলেন বাবা। সে সময় জ্যোতির বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। ওই আশ্রম থেকেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন জ্যোতি। ১৬ বছর বয়সে স্যামি রেড্ডি নামে এক যুবককে বিয়ে করেন তিনি। সামান্য জমি ছিল স্যামির।
সেই জমিতে ফসল ফলিয়েই সংসার চালাতেন তারা। তাদের দুই সন্তান হয়। সংসারে সাহায্য করতে নিজেও মাঠে কাজ করতে শুরু করেছিলেন জ্যোতি। টানা ১০ ঘণ্টা কাজ করে দিনে মাত্র ৫ রুপি মজুরি পেতেন তিনি। এ সময় নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নেহরু যুব কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি।
পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকায় সব সংসার-সন্তান-চাকরি সামলে ডক্টর বিআর আম্বেডকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন জ্যোতি। এর পর একটি স্কুলে মাসে ৩৯৮ রুপি বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ২ হাজার ৭৫০ রুপি বেতনে মণ্ডল গার্ল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। তার কাজ ছিল স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন করে কন্যাশিশুর শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয় দেখা। এই কাজ করতে করতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন জ্যোতি।
২০০১ সালে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন জ্যোতি। ননদের সঙ্গে সেখানে থাকতে শুরু করেন তিনি। পেট চালানোর দায়ে কাজ শুরু করেন দিনে ১২ ঘণ্টার। তার বেতন ছিল ৬০ ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় চার হাজার ৪৫২ টাকা। এর বাইরে কখনো বেবিসিটার, কখনো সেলসগার্লের কাজও করতেন বাড়তি উপার্জনের জন্য। সন্তানদের দেখার জন্য দেড় বছর পর দেশে ফিরে আসেন। সন্তানের কাছেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করেন। তার পর জমানো পুঁজি নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন জ্যোতি। খোলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রসেসিংয়ের কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রেও তার প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলেন জ্যোতি। প্রথম বছরেই ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৯ রুপির ব্যবসা করেন জ্যোতি। এখন একশ কর্মী রয়েছে তার অধীনে। হায়দরাবাদে একটি এবং যুক্তরাষ্ট্রে চারটি বাড়ি রয়েছে জ্যোতির। বছরে ১১১ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে তার এই কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান। পরিশ্রম আর চেষ্টায় নারী তার বাধার সিঁড়ি বেয়ে ছুঁতে পারে স্বপ্নের চূড়া। জীবনে আসা বাধাগুলোকে সাফল্যের মই ভেবে উঠতে পারাই জীবনের সার্থকতা। এ যেন সমাজের হাজারো জ্যোতির এক অনির্বাণ শিখা। যুগে যুগে জ্বলতে থাকা দীপ্তিময়ী জ্যোতি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।