
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজারে টানা পতন চললেও কোনো উদ্যোগই তা থামাতে পারছে না। বাজারসংশ্লিষ্টরা এই পরিস্থিতিকে ‘আশঙ্কাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করছেন, বিশেষ করে ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারের এ ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থার পেছনে মূলত পাঁচটি কারণ রয়েছে: বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদহার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রি (ফোর্সড সেল), নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এর প্রভাব স্পষ্ট; এক সময় ৩৩ লাখ সক্রিয় বিনিয়োগকারী থাকলেও বর্তমানে তা কমে মাত্র ১২ লাখে নেমে এসেছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার উদ্যোগ নিলেও তার ইতিবাচক প্রভাব এখনো বাজারে দেখা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের মতে, বাজারে আস্থা ফেরাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। টানা দুই মাসের পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। মাত্র এক সপ্তাহে বাজারের মূলধন উবে গেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান নেতৃত্ব বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশে অনিশ্চয়তা, ব্যাংক ও বন্ডে উচ্চ সুদহার, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের নিম্নগতি এবং নীতিনির্ধারকদের দুর্বল সিদ্ধান্ত এই সংকটের মূল কারণ। তারা মনে করেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা যত উন্নতি করবে, শেয়ারবাজারও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে। তবে বাজারে দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং কার্যকর মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি।