ঢাকা   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যাংক তহবিল অপব্যবহারে কঠোর ব্যবস্থা: অনুমোদিত হলো ব্যাংক রেজল্যুশন 

গ্রামবাংলা

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ব্যাংক তহবিল অপব্যবহারে কঠোর ব্যবস্থা: অনুমোদিত হলো ব্যাংক রেজল্যুশন 

ব্যাংকের তহবিল নিজেদের স্বার্থে বা প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে। নতুন করে অনুমোদিত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে দুর্বল ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সম্পদ, শেয়ার ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। 

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটির অনুমোদন দিয়েছে, যা রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী এককভাবে একাধিক ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বাইরে বিপুল অর্থ পাচার করেছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি রোধ করতেই এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক ও করপোরেট খাতে শৃঙ্খলা এবং জবাবদিহি বাড়বে, পাশাপাশি আমানতকারীদের স্বার্থও সুরক্ষিত থাকবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যাংক কার্যকারিতা হারায় বা দেউলিয়া হওয়ার পথে থাকে এবং আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধে অক্ষম হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। এর পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য একটি নতুন বিভাগ গঠন এবং প্রয়োজনে ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের বা আংশিক কার্যক্রম দুই কার্যদিবস বা তিন মাস পর্যন্ত স্থগিতের এখতিয়ারও পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার জানিয়েছেন, তারা শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। অন্যদিকে, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন অধ্যাদেশটির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আস্থা আরও দৃঢ় হবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক লাইসেন্স হারালে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে অবসায়নের উদ্যোগ নেবে এবং নিয়োগকৃত অবসায়ক ওই কাজ সম্পন্ন করবেন। কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি বাধ্যতামূলক থাকবে। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে। 

ব্যাংক ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং অধ্যাদেশ ভঙ্গ করলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। তবে প্রাথমিক খসড়ায় থাকা তিন বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে প্রতিদিনের দেরির জন্য ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

এ ছাড়া, ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট **ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল** গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ কাউন্সিলের স্বাধীনতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তবে উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই কাউন্সিল গঠনের পক্ষে রায় দিয়েছে।