
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী গুচ্ছগ্রামে প্রায় চার দশক ধরে মাছ চাষ করে জীবন চালাচ্ছেন ভূমিহীন বাসিন্দারা। সাত বিঘার একটি খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর তাঁদের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। এখান থেকে পাওয়া আয়ে চলে তাঁদের সংসার, এমনকি গুচ্ছগ্রামের একমাত্র মসজিদের ব্যয়ও মেটানো হয় এই পুকুরের আয় থেকেই। তবে সম্প্রতি স্থানীয় ১১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুকুরটির মালিকানা দাবি করে মাছ চাষে বাধা দিচ্ছেন, ফলে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন গুচ্ছবাসীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুরটি নিজের বলে দাবি করছে এবং দখল ছাড়লে ‘লাশ পড়বে’ বলে হুমকিও দিচ্ছে। তাঁদের দাবি, ১৯৮৮ সালে রায়কালী গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ১৯টি ভূমিহীন পরিবারকে ঘর ও ২৪৪ শতক আয়তনের একটি পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়া হয় মাছ চাষের জন্য। বর্তমানে এই গ্রামে তিন শতাধিক মানুষ বাস করেন, যাঁদের জীবিকার বড় ভরসা এই পুকুরটি।
ভূমিহীন সমবায় সমিতির সদস্য আবদুল আলীম ও সভাপতি রায়হান আলী সরদার জানান, সরকার পতনের পর থেকে মোজাহার আলী, মতিউর রহমান ও আফের আলীসহ ১১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুকুর দখলের চেষ্টা করছে। তাঁরা পুকুরটির আয়তন ৩৪৪ শতক বলে দাবি করে মালিকানা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এদিকে মালিকানা দাবিদারদের একজন মতিউর রহমান পাল্টা দাবি করে বলেন, তিনি আগে পুকুরে মাছ চাষ করতেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাঁকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং এ নিয়ে মামলা চলছে।
এ বিষয়ে আক্কেলপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, পুকুরটি বর্তমানে গুচ্ছগ্রামের দখলে আছে। এটি আগে এমআরআরসি খাসজমি ছিল, বর্তমানে ৭৬ শতক খাস হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। কীভাবে বাকি অংশ খাস থেকে বাদ পড়ল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম জানান, গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীন মানুষদের জন্য সরকার পুকুর বরাদ্দ দিয়েছে যাতে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন। তবে এই পুকুরকে কেন্দ্র করে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।