ঢাকা   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশি সন্দেহে আটক গুজরাটের হাজারো মানুষ, অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক!

জাতীয়

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশি সন্দেহে আটক গুজরাটের হাজারো মানুষ, অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক!

ভারতের গুজরাট রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে চালানো গণগ্রেফতার অভিযানে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—আটক হওয়া সাড়ে ছয় হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনকে প্রকৃত বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। বাকি সবাই যে ভারতীয়, সে সম্ভাবনাই প্রবল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গুজরাট রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় জানিয়েছেন, শনিবার ভোর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত গুজরাটের বিভিন্ন শহরে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্তে একটি বিশাল অভিযান চালানো হয়। আহমেদাবাদ ও সুরাত থেকে শুরু হয়ে পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই অভিযান। অভিযানে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়। তবে নথিপত্র যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে কেবল ৪৫০ জনই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিক, যারা অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন।

এ ঘটনার পটভূমিতে আরও ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় মুসলিম শ্রমিকদের হয়রানির অভিযোগ। 'পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ' নামের একটি সংগঠন দাবি করেছে, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে হেনস্তা, মারধর ও অপমান করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, অন্তত ১০০টি এ ধরনের ঘটনার লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে শুধু বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। একইভাবে, ওড়িশার পথে রওনা হওয়া মুর্শিদাবাদের ৬০ জন শ্রমিককেও জসিপুরে স্থানীয়দের হামলার মুখে পড়তে হয়। ভদ্রকে ইদের পরে এক ফেরিওয়ালাকেও বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে অপমান করা হয়।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের প্রধান আসিফ ফারুক বলেন, “২০১৪ সাল থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে পহেলগামের ঘটনার পর থেকে এসব বাড়ছে। ভারতীয় মুসলিম শ্রমিকদের শুধুমাত্র ভাষা ও ধর্মের কারণে বাংলাদেশি হিসেবে ট্যাগ করা হচ্ছে।”

এ অবস্থায়, গুজরাটের আহমেদাবাদের 'চান্দোলা লেক' ও 'সিয়াসতনগর বাঙাল ভাস'-এর মতো এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছে বেআইনি বসতির বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান। বুলডোজার নামিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য।

সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলে আসিফ ফারুক বলেন, “ভারতের সংবিধান যেকোনো নাগরিককে যেকোনো রাজ্যে কাজ করার অধিকার দিয়েছে। তাহলে কেবলমাত্র বাংলাভাষী ও মুসলিম হওয়ার কারণে কেন তাদের এমন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে?”

এখন প্রশ্ন উঠেছে—এটা কি নিরাপত্তার নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈষম্য? নাকি সত্যিই অনুপ্রবেশ রোধের চেষ্টা? যেটাই হোক, এই বাস্তবতায় ভাষা, পরিচয় ও ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর না করলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।