
জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছরে নামিয়ে আনার পাশাপাশি সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২৩ বছর করার দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির সভাপতি নুরুল হক এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। রাজনৈতিক সংস্কার ও জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত এই বৈঠকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়।
নুরুল হক বলেন, বিগত ৫৩ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশের রাষ্ট্র কাঠামোয় এখন বড় ধরনের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করে এই পরিবর্তনকে টেকসই করতে হবে। তিনি আরও জানান, আগে প্রস্তাবিত ১৬৬টি সংস্কারের মধ্যে ১২৭টির সঙ্গে একমত ছিল গণ অধিকার পরিষদ; তবে আজকের আলোচনায় আরও আটটি নতুন প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস যথেষ্ট নয়। একজন মায়ের সন্তানের উপযুক্ত লালন-পালনের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মস্থলে দুই বছর পর্যন্ত অর্ধেক সময় কাজের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে শুধু সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মত নয়, জনগণের অংশগ্রহণে গণভোট আয়োজনের দাবি জানানো হয়।
সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাবনায় গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, সংসদ সদস্যরা নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। একই সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে 'জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ' করার পরামর্শও দেওয়া হয়।
নুরুল হক আরও জানান, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে তারা মত দিয়েছে। ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনগুলোর জন্যও একই বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছে দলটি।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও কঠোরতা বাড়ানোর দাবি জানায় গণ অধিকার পরিষদ। তাদের মতে, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের জন্য অন্তত তিন থেকে চার বছর সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায়, যার ধারাবাহিকতায় আজ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলছে। সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং দ্রুত একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসানসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।