অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ের মধ্যেও দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে প্রবাহিত হচ্ছে নতুন বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে নতুন সদস্যপদ নিয়েছে ১২৮টি পোশাক কারখানা, যেখানে উৎপাদন পুরোদমে শুরু হলে কর্মসংস্থান হবে ৭৪ হাজার মানুষের। এর পাশাপাশি পুরোনো অনেক কারখানাও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করেছে।
তবে একই সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে ১১৩টি কারখানা, কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ জন শ্রমিক। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত আগস্টের পরই ৬৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ৭৬ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের জীবনে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে, কারখানা বন্ধ ও চালুর টানাপোড়েনের মাঝেও দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি। নতুন কারখানার তালিকায় আছে একেএইচ আউটওয়্যার, এ জেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সুপ্রিম আউটফিটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৮টি কারখানায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করবেন।
গাজীপুরের এ জেড কম্পোজিট পরীক্ষামূলক উৎপাদন চালু করে ইতিমধ্যেই ১৫০ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে; ঈদের পর পুরোদমে চালু হলে কর্মী সংখ্যা ৭০০–৮০০ হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল হাসান। অন্যদিকে, স্প্যারো গ্রুপ গাজীপুরে চালু করেছে `স্প্যারো গ্রিনটেক`—যেখানে ইতিমধ্যেই ১ হাজার ৮০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে আগামী মৌসুমের অর্ডার কিছুটা কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা কিছুটা সতর্ক রয়েছেন।
এদিকে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানিয়েছেন, বড় ও মাঝারি কারখানাগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, তাই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে; তবে ক্ষুদ্র কারখানাগুলো টিকতে পারছে না। বন্ধ হওয়া কারখানার তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকোর শিল্পপার্কের ১৪টি কারখানা বন্ধ করে ৩১ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা মেটাতে সরকার ৫২৫ কোটি টাকা দিয়েছে, যদিও অনেক শ্রমিক এখনো তাদের পাওনা বুঝে পাননি।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘নতুন কারখানা খোলা এবং কিছু কারখানা বন্ধ হওয়া শিল্পের স্বাভাবিক চক্র। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা কেটে গেলে বিনিয়োগের গতি আরও বাড়বে।’
শেয়ার বিজনেস24.কম