
ফুটবলে এল ক্লাসিকো মানেই উত্তেজনা। কিন্তু এবার যেন দ্বন্দ্বের ভারসাম্য অনেকটাই একপেশে। যখন বার্সেলোনা শিখরে, রিয়াল মাদ্রিদ তখন পতনের ঘূর্ণিতে। শনিবারের (২৬ এপ্রিল) কোপা দেল রে ফাইনাল কেবল একটি শিরোপার লড়াই নয়, বরং মাদ্রিদের ধস নামার করুণ চিত্র স্পষ্ট করে তুলতে পারে। আর একবার যদি বার্সেলোনার কাছে তারা ধরাশায়ী হয়, তবে তা হতে পারে কার্লো আনচেলত্তির যুগের প্রায় নিশ্চিত অবসান।
তবে এই দৃশ্যপট তো হওয়ার কথা ছিল না। মৌসুমের শুরুতে যেভাবে প্রত্যাশার পাহাড় গড়া হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদকে ঘিরে, তা এখন ভেঙে টুকরো টুকরো। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের স্বপ্ন শেষ, লা লিগাতেও পয়েন্ট হারানোর মিছিল, আর মাঝে মাঝে কোনো একক নৈপুণ্য কিংবা ভাগ্যের আশীর্বাদে কোনো রকমে জয় ছিনিয়ে নেওয়া—এটাই এখনকার মাদ্রিদ।
এমন সময় তাদের সামনে এল ক্লাসিকোর মতো এক মহারণ। বরাবরের মতোই রোমাঞ্চকর হলেও এবারের দ্বৈরথের গুরুত্ব আরও বেশি। মাদ্রিদ পতনের দিকে, বার্সেলোনা উত্থানের পথে। মৌসুম শুরুর আগেই অনেকে ভেবেছিলেন, মাদ্রিদই হবে ইউরোপ দাপানো দল আর বার্সা থাকবে পুনর্গঠনের পর্যায়ে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। শনিবারের ফাইনাল হয়তো প্রমাণ করে দেবে, কতটা পিছিয়ে পড়েছে আনচেলত্তির দল।
এটা অবশ্য এই মৌসুমে প্রথমবার হবে না। আগের দুই ক্লাসিকোতেও বার্সেলোনা মাদ্রিদকে অসহায় করে ছেড়েছে। এই মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রথম ক্লাসিকোতেই বার্সা ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছিল মাদ্রিদকে। এরপর সুপার কাপে ৫-২ গোলে ভরাডুবি। সেদিন আনচেলত্তি দল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমরা ফুটবলই খেলিনি।’ ম্যাচশেষে ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
পরপর দুই ম্যাচে নয় গোল হজম করে মাদ্রিদ। প্রতিপক্ষের আক্রমণের সহজ ফর্মুলা যেন একেবারেই ধরতে পারছে না তারা। মাঝমাঠ ভেঙে পড়ছে, পেদ্রি বা ইয়ামালরা দৌড়ে ঢুকে যাচ্ছে, এরপর রাফিনহা বা ইয়ামালের পাস থেকে স্ট্রাইকাররা সহজে গোল দিচ্ছেন। আনচেলত্তি নিজের মাঝমাঠ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং বাধ্য হয়ে ৪-৪-২ ফর্মেশনে ফিরেছেন, যেখানে রদ্রিগোকে বাদ দেওয়া হয় এবং বেলিংহামের আক্রমণাত্মক ভূমিকা কমে যায়।
রক্ষণভাগে ইনজুরিও বড় সমস্যা। দানি কারভাহাল, এদের মিলিতাও, ডেভিড আলাবা সবাই অনুপস্থিত। লুকাস ভাসকেজ কিংবা রাউল আসেনসিও চেষ্টা করলেও নিখুঁত নয়, ফলে রিয়াল এখন সহজেই ভেঙে পড়ছে।
এমবাপ্পের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ভালো হলেও, মূল স্ট্রাইকার হিসেবে তার ভূমিকা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। এমবাপ্পে সহজাত ‘নম্বর নাইন’ নন। যখন ভিনিসিয়ুস কাটা ব্যাক করেন, তখন এমবাপ্পে গোলপোস্টের কাছে থাকার পরিবর্তে দূরে ঘোরাফেরা করেন। এভাবে তাকে দিয়ে আক্রমণের ধার কমছে।
আরও আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, যখন সবাই ভেবেছিল বেলিংহাম-ভিনিসিয়ুস-এমবাপ্পে ব্যালন ডি'অর রেসে এগিয়ে থাকবে, বাস্তবে তাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে বার্সেলোনার ইয়ামাল ও রাফিনহা। ইয়ামালের ১৬ গোল ও ২১ অ্যাসিস্ট কিংবা রাফিনহার গতিময়তা এখন বিশ্বসেরা ফর্মে।
এদিকে খবর বেরিয়েছে, মৌসুম শেষে আনচেলত্তি বিদায় নিচ্ছেন। ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ হলেও, এবার আর পুরনো জাদু কাজ করছে না। তবে বিদায়ের আগেই হয়তো শেষ একবারের জন্য বড় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে মাদ্রিদ। দুই ক্লাসিকোতে হারার পর, তৃতীয় হার—তা-ও ফাইনালে—কঠিন এক আঘাত হবে।
তবে মাদ্রিদের ইতিহাস বলে, বড় ম্যাচে চাপের মুখে তারা জেগে ওঠে। হয়তো এই ফাইনালই হবে রিয়ালের ‘মিরাকল ম্যাচ’। এল ক্লাসিকোতে মাদ্রিদ আবার নিজেদের জানান দেবে—আশা তো করতেই পারে তারা!