
সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। বাজারের এই নিম্নমুখী প্রবণতা স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাই বাজার পরিস্থিতির প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসি একটি চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিএসইসি এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপপরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন। সংশ্লিষ্ট কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএসইসি কর্তৃপক্ষের জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের যে ধারাবাহিক পতন ঘটেছে, তা স্বাভাবিক বাজার আচরণের মধ্যে পড়ে না। বরং এটি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক হওয়ায় বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (আইন নম্বর ১৫) অনুযায়ী এই কমিটিকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বর্তমান কমিশন বাজারের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মনে করছেন, নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের দুর্বলতা, বাজার নজরদারিতে শৈথিল্য এবং স্বচ্ছতার অভাব শেয়ারবাজারের এই পতনের জন্য মূলত দায়ী। এরই ধারাবাহিকতায়, দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ‘ডিএসইএক্স’ গত কয়েক মাসে প্রায় ১২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আর্থিক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও তার সুফল শেয়ারবাজারে প্রতিফলিত হয়নি। বরং, বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নানা সময়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তাদের অন্যতম প্রধান দাবি হচ্ছে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বর্তমান চেয়ারম্যান এবং কমিশন বাজার ব্যবস্থাপনায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না, যার ফলেই বাজারে টানা ধস নেমেছে।
শেয়ারবাজার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। একে স্থিতিশীল ও গতিশীল রাখতে হলে বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সঠিক তদারকি নিশ্চিত করা জরুরি। তাই বিএসইসির গঠিত এই তদন্ত কমিটি কী ধরনের কারণ খুঁজে বের করে এবং তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটির দিকে এখন পুরো বাজারের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী, কমিশনের কার্যকর উদ্যোগ শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে আরও স্থিতিশীল করে তুলবে।