
বর্তমান শেয়ারবাজার পরিস্থিতির সাথে টাস্কফোর্সের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছি, আমাদের লক্ষ্য হলো শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়; বরং এমন একটি কাঠামো তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে বাজারে অতীতের মতো সংকট আর ফিরে না আসে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে মার্জিন রুলস-১৯৯৯ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা’ উপলক্ষে। এতে টাস্কফোর্সের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন এবং প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি ও সিইও এবং ফোকাস গ্রুপের সদস্য মো. মনিরুজ্জামান, সিএফএ।
অধ্যাপক আল-আমিন আরও জানান, "আমরা সময় নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ করেছি। শেয়ারবাজারের সব অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে বারবার বসেছি, মতামত গ্রহণ করেছি। প্রতিটি বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্র্যাকটিশনারদের যুক্ত করে ফোকাস গ্রুপ ও কনসালটেশন গ্রুপ গঠন করেছি। আমাদের সুপারিশ যেন তাত্ত্বিক না হয়, বাস্তবভিত্তিক হয় — সেটাই নিশ্চিত করেছি।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, "মার্জিন লোনের অপব্যবহার ও গ্যাম্বলিংয়ের কারণে বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিশাল সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যা আজকের বাজার সংকটের অন্যতম মূল কারণ।"
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, "অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। কিছু মিসকমিউনিকেশন থাকলেও আমরা চেষ্টা করেছি শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে।"
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশমালা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর দেশের শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। পরে তাদের পরামর্শ কার্যকর করতে আরও বিস্তৃত পরিসরে ‘শেয়ারবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়, যেখানে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের যুক্ত করা হয়।
টাস্কফোর্স গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির কাছে মার্জিন রুলস-১৯৯৯ যুগোপযোগী করার একটি খসড়া সুপারিশ জমা দেয়। এরপর সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে শেয়ারবাজার হবে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী এবং বিনিয়োগকারীবান্ধব — এমন প্রত্যাশাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।