
দেশীয় পণ্যকে ভালোবেসে, অদম্য সাহস আর নিরলস পরিশ্রম দিয়ে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন ‘মাধবী মার্ট’-এর স্বত্বাধিকারী সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই নারীর আজকের সাফল্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার গল্প।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল গ্রামে বেড়ে ওঠা সাবিনা পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার ইডেন কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ার সময়ই তার উদ্যোক্তা জীবনের সূচনা। এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য কিনে বিক্রি শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথমে সাইকেলে চড়ে পরিচিতদের অফিস ও ব্যাংকে গিয়ে কাপড় বিক্রি করতেন।
পরিশ্রমের ফল মিলতে দেরি হয়নি। ২০১৮ সালে ফার্মগেটের ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটে একটি দোকান নেন। তবে কোভিড মহামারির আঘাতে ২০২০ সালে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন। কিন্তু হার মানেননি। ২০২১ সালে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন দেশি পণ্যের ব্যবসা। বিশেষ করে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে গিয়ে নকশিকাঁথার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে এবং সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েই তৈরি করেন মানসম্পন্ন পণ্যের ভাণ্ডার।
আজ ‘মাধবী মার্ট’-এর মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা, জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত, সিলেটের মণিপুরি, কুমিল্লার খাদি ও বাটিক, রাজশাহী সিল্কের কাঁথা স্টিচসহ নানা ধরনের দেশি পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে। প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠানে। মাধবী মার্টের মূল কার্যালয় এখন উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশনের পাশে।
শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যেই থেমে থাকেননি মাধবী। তিনি দেশের ৫১টি জেলা ঘুরে নারীদের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। এ পর্যন্ত ৪৫০ জনেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসার আওতায় এনেছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের লাভের একটি অংশ ব্যয় করেন ক্যানসার আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসায়।
এই ব্যতিক্রমী মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মাধবী পেয়েছেন 'দ্য ডেইলি স্টার-আইপিডিসি আনসাং উইমেন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ড', রোটারি ইন্টারন্যাশনাল সম্মাননা এবং আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার।
বর্তমানে তিনি নারীদের জন্য বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাধবী মার্টের শাখা খুলে বিশ্বব্যাপী দেশি পণ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মাধবী বলেন,
"সফল হতে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। জীবনের প্রতিটি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হার না মানলে সফলতা আসবেই।"