
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাংশে নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন সাহসী ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি জানতেন, মৃত্যু তার খুব কাছেই। তবুও চেয়েছিলেন, তার মৃত্যু যেন নীরব না হয়—তার মৃত্যু যেন হয়ে ওঠে সময়ের সাক্ষী, ইতিহাসের প্রেরণা।
মাত্র ২৫ বছর বয়সী ফাতিমা, যিনি বিয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে নিজ বাড়িতে বিমান হামলায় নিহত হন, তার গর্ভবতী বোনসহ পরিবারের আরও ১০ সদস্যও একই হামলায় প্রাণ হারান।
দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বেদনার ছবি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছিলেন ফাতিমা। মৃত্যুর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছিলেন,
"আমি চাই না নীরবে চলে যেতে। চাই এমন মৃত্যু, যা কেবল সংখ্যা হয়ে থাকবে না, বরং সময়ের সঙ্গে গেঁথে থাকবে এক অনন্ত কোলাহলে।"
বেদনার্ত হলেও সত্য, তার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।
তার মৃত্যুর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ঘোষণা আসে, ইসরায়েলি হামলার মধ্যে ফাতিমার জীবন নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘পুট ইয়র সোল অন ইয়র হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে। ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসির এ নির্মাণে, হাসুনা হয়ে উঠেছিলেন ‘গাজায় আমার একমাত্র চোখ’।
ফাতিমার মৃত্যুতে গোটা সাংবাদিক মহলে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপে লাজারিনি বলেন,
"ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা বীরত্বের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তবে তার জন্য তাদের ভয়ংকর মূল্য দিতে হচ্ছে।"
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধের মধ্যে গাজায় ইতোমধ্যে ২০৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন—কেউ রিপোর্টিং করতে গিয়ে, কেউ নিজ বাড়িতে।
ফাতিমা হাসুনা—একজন সাহসী যোদ্ধা, যার ক্যামেরার লেন্সে বিশ্ব দেখেছে গাজার কান্না ও প্রতিরোধের গল্প। আজ তিনি নেই, কিন্তু তার আলো এখনও জ্বলছে; তার গল্প বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে গাজার মানুষের বেঁচে থাকার আর্তি।
আজ সত্যিই, ফাতিমার উচ্চস্বরে মৃত্যুর ধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবী জুড়ে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান