facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১১ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৫

Walton

আকাশে উড়ুক্কু গাড়ি: স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা!


০১ মার্চ ২০২৫ শনিবার, ০১:২৯  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


আকাশে উড়ুক্কু গাড়ি: স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা!

আকাশে ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন মানুষের অনেক পুরনো। গ্রিক পুরাণে দুটি চরিত্রের নাম ছিল ডিডেলাস ও ইকারুস। ডিডেলাসের ছেলের নাম ইকারুস। ক্রিট দ্বীপে বন্দী দশা থেকে পালানোর জন্য তারা পাখির পালক দিয়ে ডানা তৈরি করে আকাশে উড়তে থাকে। তবে ডিডেলাস তার ছেলে ইকারুসকে বেশী ওপরে উড়তে মানা করেছিল। কারণ এতে সূর্যের তাপে মোম গলে পাখির পালক দিয়ে বানানো ডানা খুলে যাবে। আর ইকারুস সেটা করার ফলে ওপরে থেকে পড়ে মারা যায়।

গল্পটা কাল্পনিক। তবে মানুষের ওড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন আমেরিকার দুই বিজ্ঞানী রাইট ব্রাদার্স। তাঁরা মানুষের দেহে ডানা দিলেন না, কিন্তু এমন একটা যন্ত্র উপহার দিলেন যা মানুষকে আকাশে নিয়ে যায়, যার নাম অ্যারোপ্লেন। মাটির মানুষ আকাশে উড়তে শিখল। তবে এর আগে মানুষ রাস্তায় চলার জন্য দ্রুত গতির একটা যান বানিয়ে ফেলেছে।

মানুষের স্বপ্নটা কখনোই এক জায়গায় থেমে থাকে না। বিমান নয়, মানুষ নিজের গাড়িটাকে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে। আর সেজন্য সে চেষ্টা চালিয়ে গেছে উড়ুক্ক গাড়ি আবিষ্কারের। এমনকি বিমান আবিষ্কারের আগে উড়ুক্ক গাড়ির কথা চিন্তা করে ফেলেছিল মানুষ।

১৮৪১ সালে বিশ্বের প্রথম উড়ুক্ক গাড়ির ডিজাইন করা হয়। এই গাড়ির নাম রাখা হয়েছিল হেনসন এরিয়েল স্টিম ক্যারিজ। ব্রিটেনের দুই আবিষ্কারক উইলিয়াম স্যামুয়েল হ্যানসেন ও জন স্ট্রিং ফেলোর নামে এই যন্ত্রের মডেল পেটেন্ট করা আছে। মনে রাখতে হবে, যান্ত্রিক গাড়ির কিন্তু তখন আবিষ্কার হয়নি।

প্রথম ডিজাইনে নির্মাণ করা গাড়িটি আকাশে উড়তে না পারলে দ্বিতীয় ডিজাইনের গাড়িটি আকাশে কিছুক্ষণ উড়তে সক্ষম হয়। তবে এই ডিজাইনের গাড়ি আকাশে বেশিদূর উড়তে না পারলেও মানুষের উড়ুক্ক গাড়িতে চড়ার স্বপ্নকে উড়িয়ে দিয়ে যায়।

এরপর বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।


কার্টিস অটোপ্লেন
১৯১৭ সালে আমেরিকার এক বিমান প্রদর্শনীতে গ্লেন কার্টিস নামের এক আবিষ্কারক এক বিশেষ বিমান নিয়ে হাজির হন, যা দেখতে গাড়ির মতো। রানওয়েতে নয় , গাড়িটি চলবে রাস্তায়। এটাকে অনেকে বিশ্বের প্রথম উড়ুক্ক গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করে। গাড়িটা ওড়েনি, কিন্তু গাড়িকে ওড়ানোর চিন্তাকে এটাই প্রথম আকাশে নিয়ে যায়।

ওয়াটারম্যান অ্যারোবাইল
আকাশে উড়ে ঘুরে বেড়াতে পারে এমন প্রথম উড়ুক্ক গাড়ির নাম ওয়াটারম্যান এ্যারোবাইল। এটি আসলে বিমান, তবে একে গাড়ি বলার কারণ এটা রানওয়ে নয়, যে কোনো সাধারণ রাস্তায় উড়তে ও নামতে পারত।

১৯৯৭ সালে ওয়ালদো ওয়াটারম্যানের ডিজাইন করে এটিকে বাজারে আনেন। কিন্তু মাত্র পাঁচটি উড়ুক্ক গাড়ি মানে বিমান বিক্রি হয়।

কনফে এয়ার মডেল
এই বিমানটিকে ডাকা হতো হল ফ্লাইং কার নামে। গাড়ির ওপর প্লেন বসিয়ে দিলে দেখতে যেমন লাগে, এটা দেখতে হুবহু সে রকম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থিওডোর পি টেড হাল নামের এই গাড়ি আবিষ্কার করেন তবে ১৯৪৬ সালে এই উড়ুক্ক গাড়িকে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ওড়ানো হয়। ১৯৪৭ সালে দুটি গাড়ি আকাশে ওড়ে। এর একটি জ্বালানি সমস্যার কারণে আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে যায়। তবে অন্যটি সফল ভাবে ওড়া শেষ করে। নিরাপত্তার কারণে এই গাড়িগুলোকে আর আকাশে দেখা যায়নি।

ফোর্ড লেভাকারছবি: উইকিপিডিয়া
১৯৫৯ সালে বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ফোর্ড একটি গাড়ি ডিজাইন করার কথা জানায় যেটা উড়তে সক্ষম। পত্রিকায় এই গাড়ির মডেলের ছবি ছাপাও হয়েছে। তবে বাস্তবে গাড়িটা আর বানানো হয়নি। এর যে মডেল বানানো হয়েছিল সেটা মাটি থেকে ১২৫ ইঞ্চি ওপরে উঠেছিল।

এয়ারো কার
মালটোন টাইলর নামের এক আমেরিকান আবিষ্কারক এই গাড়ি আবিষ্কার করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি গাড়িটির প্রথম মডেল উদ্ধাবন করেন, কিন্তু ১৯৬০ সালে তিনি তাঁর শেষ মডেলটি আকাশে ওড়ান। এই গাড়ির যে মডেল বানানো হয়েছিল, সেটা মাটিতে ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে আর আকাশে ১১০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারত। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালে ডিজনি মুভি কোম্পানি প্লেন নামের একটি মুভি তৈরি করে।

আভে মিজার
১৯৭৩ সালে এভে মিজার নামের বিমান গাড়ি বানানো হয়, এটার মধ্যে গাড়ি ও বিমান দুটোর ইঞ্জিন রাখা হয় যেন এটা মাটিতে চলতে এবং আকাশে উড়তে পারে। কিন্তু উড়তে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায় গাড়িটি, সেই সঙ্গে এই গাড়ি ওড়ানোর স্বপ্নও।

স্কাই কমিউটার
বিমানের ইঞ্জিন নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং আশির দশকে এমন এক যান তৈরি করার চেষ্টা শুরু করে, যা আকাশে উড়লেও গাড়ির মত রাস্তায় চলতে পারবে। এর নাম ছিল স্কাই কমিউটার। এতে তারা গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন যুক্ত করে। গাড়ি আকাশে উড়তে সক্ষম হলেও এর দাম ধরা হয়েছিল ৭১, ০০০ হাজার মার্কিন ডলার। এই প্রকল্পের জন্য বোয়িং ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে। কিন্তু এটি আর বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি

ভিটল এয়ার কার
জেটসন নামের একটি কার্টুন সিরিজে দেখানো হতো ভবিষ্যতের পৃথিবী, যেখানে গাড়ি ওড়ে (এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে এই কার্টুনটি দেখানো হতো)। পল মোলার নামের এক আবিষ্কারক জেটসনের সেই গাড়িকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কথা ঘোষণা দেন। এর নাম ছিল ভিটল (ইংরেজিতে ভার্টিকাল টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং ) ফ্লাইং কার এম ৪০০। তবে বাস্তবে সেই গাড়ি ওড়ার আগে মোলারের নামে শেয়ার বাজারের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতারণার অভিযোগ আনে। সে এই গাড়ি নির্মাণের টাকা শেয়ার মার্কেট থেকে তোলার চেষ্টা করার অভিযোগে।

ফ্লাইং মারুতি
ভারতের আবিষ্কারক এ কে বিশ্বনাথন দাবি করেছিলেন তাঁর মারুতি গাড়ি আকাশে উড়বে। এই গাড়ি দেখতে ছিল বিখ্যাত মুভি সিরিজ ব্যাক টু দ্য ফিউচারের গাড়ির মতো। এই গাড়ি বেশি দূর উড়তে পারেনি। এই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছিল।

স্বপ্ন হতে যাচ্ছে সত্যি
তবে আলেফ অ্যারোনটিকস ঘোষণা দিয়েছে এ বছর তারা বাজারে উড়ুক্কু গাড়ি আনবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নির্মাতা সংস্থা আলেফ গাড়ি ওড়ার একটি ভিডিও দেখিয়েছে। তারা বলছে আলেফ নামের গাড়িটি এবছরের শেষে পাওয়া যাবে।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি -এর সর্বশেষ