facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, ২০২৫

Walton

আর্থিক খাতে ৩৫ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি, সেবচেয়ে নাজুক ৫ প্রতিষ্ঠান


১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার, ০৭:২৭  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


আর্থিক খাতে ৩৫ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি, সেবচেয়ে নাজুক ৫ প্রতিষ্ঠান

ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট কাটছেই না, বরং দিন দিন খেলাপি ঋণের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের অনিয়মের কারণে পুরো খাত আজ সংকটের মুখে। তার মালিকানাধীন ও পরিচালিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণের হার বেড়েই চলেছে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬,১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৫২ শতাংশ। গত জুন মাসে এই পরিমাণ ছিল ২৪,৭১১ কোটি টাকা, অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১,৪৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১,৫৬৭ কোটি টাকা, যা তখন মোট ঋণের ২৯.২৭ শতাংশ ছিল।

শীর্ষ খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

  • এফএএস ফিন্যান্স – খেলাপি ঋণ ৯৯.৯২% (১,৮২০ কোটি টাকা)
  • ফারইস্ট ফিন্যান্স – খেলাপি ঋণ ৯৮% (৮৭২ কোটি টাকা)
  • বিআইএফসি ও পিপলস লিজিং – খেলাপি ঋণ ৯৭%
  • ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফিন্যান্স ও আভিভা ফিন্যান্স – খেলাপি ঋণের হার ৯০%-এর আশপাশে

ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশি সংকট

যদিও ব্যাংক খাতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ব্যাংকের গোপন খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে কঠোর তদারকির মধ্যে থাকায় তারা প্রকৃত খেলাপি ঋণের হিসাব প্রকাশ করে আসছে।

তহবিল সংকটে ঋণ বিতরণ কমছে

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানত ছিল ৪৭,৪৯১ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের মার্চে কমে দাঁড়ায় ৪৭,০৩০ কোটি টাকায়। জুনে কিছুটা বেড়ে ৪৭,৯০৬ কোটি টাকা হলেও সেপ্টেম্বরে আবার কমে ৪৭,৮৩৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। তহবিল সংকটের কারণে ঋণ বিতরণও কমে গেছে, যার ফলে এই খাতের স্থিতিশীলতা আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

স্বল্প খেলাপি ঋণবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান

অবশ্য কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে যাদের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে। এগুলো হলো:

  1. আইডিএলসি ফাইন্যান্স
  2. ইউনাইটেড ফাইন্যান্স
  3. লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স
  4. অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স
  5. ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
  6. আইপিডিসি ফাইন্যান্স
  7. স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স

সমাধানের উপায় কী?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের কঠোর নীতিমালা গ্রহণ এবং আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। তদারকি আরও জোরদার করে, দুর্নীতি দমন এবং ঋণ পুনর্গঠনের মতো পদক্ষেপ নিলে এই সংকট কিছুটা কমতে পারে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবর্ধমান এই খেলাপি ঋণ নিয়ে নীতিনির্ধারকরা কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

অর্থ ও বাণিজ্য -এর সর্বশেষ