০৪ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার, ০২:৪১ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে এক ভয়াবহ সংকট নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) হঠাৎ করেই তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় চাকরি হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন হাজারো উন্নয়নকর্মী। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করা পেশাদাররা এখন দিশেহারা, তাদের অনেকে বাধ্য হচ্ছেন শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে।
গত ১৫ বছর ধরে উন্নয়ন খাতে কাজ করা সাইফুল আলমও এই সংকটের শিকার। ঢাকায় বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অর্থবিভাগে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু ৪৭ বছর বয়সে এসে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে চাকরি হারিয়েছেন। দুই সন্তানকে শহরের নামী স্কুলে পড়ালেও এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
সাইফুল বলেন, "আমি এখন প্রকল্পের হিসাবপত্র চূড়ান্ত করছি এবং ইউএসএআইডির ওয়াশিংটন কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তের কাগজপত্র তৈরি করছি। এরপর নিজেকে এক মাস সময় দেব নতুন চাকরি খোঁজার জন্য। যদি কিছু না পাই, তাহলে গ্রামে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।"
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির প্রায় ১০০টি উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগই বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ৪০০টি এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত এসব প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের কারণে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত করার নির্দেশ দেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ শতাংশেরও বেশি বৈদেশিক সহায়তা চুক্তি বাতিল এবং প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার তহবিল কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
শুধু উন্নয়নকর্মী নয়, সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কৃষি, শ্রম অধিকার, মানবপাচার রোধ এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও দুর্দশায় পড়বে।
একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, "চিন্তা করুন, টিকাদান কর্মসূচি বা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ হলে সাধারণ মানুষ কী করবে? ইউএসএআইডি এমন কিছু ওষুধ সরবরাহ করত যা লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করে না।"
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমরা ইউএসএআইডি-অর্থায়িত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের বেকারত্ব সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। আমরা এনজিওগুলোকে অনুরোধ করেছি যেন তারা যতটা সম্ভব বেকার কর্মীদের অন্য প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে।"
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এনজিও নির্ভরতার পরিবর্তে বাংলাদেশকে এখন স্বনির্ভরতার দিকে এগোতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, "বিদেশি অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।"
১. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প তহবিল সংগ্রহ: উন্নয়ন খাতের জন্য সরকার ও করপোরেট সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। 2. সার্বভৌম তহবিল গঠন: দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার নিজস্ব তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করতে পারে। 3. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: সরকার ও বেসরকারি খাতকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউএসএআইডির হঠাৎ তহবিল বন্ধের ফলে বাংলাদেশে উন্নয়ন খাতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান হারানোর পাশাপাশি অনেক দরিদ্র মানুষের সহায়তা পাওয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকার, বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে উন্নয়ন কার্যক্রম থেমে না যায় এবং কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।