১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার, ০৪:৫৪ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শেয়ার বিজনেস24.কম
দলের প্রধান কারাগারে। নির্বাচনে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অনুগত সদস্যরা নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি দলীয় প্রতীক বা পরিচয়। ভোটে লড়তে হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়ে। এর পরও পাকিস্তানের সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জিতে নিয়েছেন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরাই। বেসরকারিভাবে সর্বশেষ প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলটির ইমরান অনুগত সদস্যরা জিতে নিয়েছেন ৯৪টি আসন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৪ আসন। আর বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪ আসন।
চূড়ান্ত প্রতিকূলতার নির্বাচনে ইমরান খানের অনুগতদের এ সাফল্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমীকরণকে এখন বেশ জটিল করে তুলেছে। দলটির সদস্যদের এ অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে কৃতিত্বের অন্যতম বড় দাবিদার দুই নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন ইমরান খানের বোন আলিমা খানুম। আর অন্যজন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির বোন মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তু।
পিটিআইয়ের এ সাফল্যকে দলটির নির্বাচনে জয়লাভ হিসেবে দেখছেন আলিমা খানুম। এরই মধ্যে তিনি বলেছেন, তেহরিক-ই-ইনসাফই পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠনের দাবিদার। এছাড়া এবারের নির্বাচনে পিটিআইকে হারাতে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে পিটিআই কর্মী ও সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন আলিমা খানুম। পিটিআই কর্মীদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইমরান খান জেলে যাওয়ার পর দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন আলিমা খানুম। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তাদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি কঠোর ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সক্রিয় ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
ইমরান খানের পদচ্যুতির পর থেকেই আলিমা খানুম তার সমর্থনে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। মে মাসে ইমরান খানের সমর্থনে পাকিস্তানজুড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক তিনি। ওই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে আসামিও করেছে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবরে আদালতে এক মামলার হাজিরা দেয়ার পর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোর সামনে আলিমা খানুম ঘোষণা দেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, ভাই ইমরান খানের পাশে তিনি থাকবেন।
গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে ‘সমাজে আতঙ্ক ছড়ানোর’ অভিযোগ তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন জারি করেছিল পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)। ওই সময় বলা হয়, এ সমনের জবাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা না দেয়া হলে ধরে নেয়া হবে আলিমা খানুমের নিজের পক্ষে বলার মতো কোনো বক্তব্য নেই।
সর্বশেষ শনিবারও নিউজ১৮কে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচনের স্বাক্ষরিত ফলাফল তার হাতে এসেছে। এ অনুযায়ী পিটিআই এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। যদিও এমন প্রেক্ষাপটে ইমরান খানের জীবন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করতে চায়।
ইমরান খানের পদচ্যুতির পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতির আলোচনায় আলিমা খানুমের নাম উঠে এসেছে বারবার। আগে তার পরিচিতি ছিল পাকিস্তানের অন্যতম নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। লাহোরভিত্তিক টেক্সটাইল বায়িং হাউজ ডটকম সোর্সিং প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। লাহোর ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্সের সাবেক শিক্ষার্থী আলিমা খানুমের ব্যবসার পরিধি লাহোর থেকে করাচি হয়ে নিউইয়র্ক পর্যন্ত বিস্তৃত।
আলিমা খানুমের মতো আলোচনায় না এলেও পিটিআই সদস্যদের এবারের সফলতায় ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির বোন মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তুরও কৃতিত্ব রয়েছে বলে দাবি করা হয়। বিশেষ করে বুশরা বিবি ও ইমরান খানের বিয়ে নিয়ে আদালতের রায় ও পরবর্তী বিতর্কের সময়ে তাদের দুজনের পক্ষে বেশ জোরালো ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন তিনি। তার এ ক্যাম্পেইন সাধারণ পাকিস্তানিদের মধ্যে ইমরান-বুশরার প্রতি সহানুভূতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।
লন্ডন বিজনেস স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তু ইমরান খানের শাসনামলে পাকিস্তানের হায়ার এডুকেশন কমিশনের (এইচইসি) সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব আরব আমিরাতের ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পেশায় ডাটা সায়েন্টিস্ট মারিয়াম রিয়াজ এছাড়া অতীতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি), বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও ইউনেস্কোর বিভিন্ন প্রকল্পে সংযুক্ত ছিলেন। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই পিটিআইয়ের সক্রিয় ও প্রভাবশালী কর্মী ছিলেন মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তু। বোন বুশরা বিবির সঙ্গে ইমরান খানকে তিনিই প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন বলে পরে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
ইমরান সমর্থকরা অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করলেও তাদের পক্ষে এখন সরকার গঠন করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৬৬ আসনের মধ্যে পিটিআই সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছে ৯৪টি আসনে। পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৪টি। ৫৪ আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পিপিপি। বাকি আসনে বিজয়ী হয়েছে ছোট দল ও অন্য স্বতন্ত্ররা।
এককভাবে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শুরু হয়েছে জোট সরকার গঠনের তৎপরতা। শুক্রবার রাতে ভোটের ফল আসতে শুরু করলে রাতেই সরকার গঠনের ঘোষণা দেন নওয়াজ শরিফ। জোট সরকার গঠনে পিপিপিসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ছোট ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে নির্দেশ দেন তিনি। তার দল চাইছে, নতুন জোট গঠিত হলে সেই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন নওয়াজ শরিফ।
যদিও আরেক বড় দল পিপিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জোট গঠনের বিষয়ে তাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। তবে দলটি চাইছে নওয়াজ শরিফ নয়, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন পিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। পিপিপির মুখপাত্র খুরশিদ শাহ জিও নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তার দলের এমন অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও তার বাবা আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠকে ‘পাকিস্তানের জন্য’ একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন শাহবাজ শরিফ।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।