২২ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার, ০৮:৫১ পিএম
স্টাফ রিপোর্টার
শেয়ার বিজনেস24.কম
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে লুটেরা গোষ্ঠী লুটপাটের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। যার ফলে মানুষের আস্থার এই জায়গাটি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের অনিয়মগুলো গোপন রাখা হলেও সরকারের পতনের পর এসব অনিয়মের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে ব্যাপক আস্থার সংকট তৈরি হয় এবং ইসলামি ব্যাংকগুলো লুটেরাদের লুটপাটের খেসারত দিতে শুরু করে।
সঞ্চয়কারীদের মধ্যে আস্থা হ্রাস পাওয়ার কারণে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ক্রমাগত কমছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আমানত কমলেও বেড়েছে মোট বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়।
তবে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোগুলোতে আমানত-বিনিয়োগ ইতিবাচক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ইসলামি ব্যাংকের ওপর মানুষের প্রবল আস্থা রয়েছে। এখনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইসলামি ব্যাংকগুলো আবারও শীর্ষস্থান দখল করবে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান উল্লেখ করেন, ইসলামি ব্যাংকগুলো এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করছে। অনেক গ্রাহক একসাথে টাকা তুলতে আসায় একটি প্যানিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এছাড়া, ব্যাংকটির তারল্য সহায়তা সময়মতো না পাওয়ার বিষয়টিও সংকটের এক কারণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। যা গত জুন শেষে ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৮ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।
তবে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে আমানত কমলের ও প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও ইন্ডোজগুলোতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রিত ৬ ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে ৫ ডিসেম্বর এলসি খোলার ওপর শতভাগ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়।
অন্যান্য খাতে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম যেমন আমদানি এবং রপ্তানি বেড়েছে। গত জুনে ইসলামী ব্যাংকগুলোর রপ্তানি ২৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা থেকে সেপ্টেম্বর শেষে ৩৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সঙ্গে আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকায়।
এদিকে, প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্সেও উল্লম্ফন হয়েছে। গত জুনে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স ছিল ২৭ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা, যা এখন ৩০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়ার সরকারের মতে, ইসলামি ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। শরিয়াহ অনুযায়ী খেলাপিরা যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। গ্রেপ্তারের মাধ্যমে খেলাপি আদায় করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
এভাবে, ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য একটি সংকটময় অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত এই সংকট কাটাতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।