facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ অক্টোবর বুধবার, ২০২৪

Walton

উদাসিনতায় সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ


২২ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার, ১০:৫৮  এএম

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

শেয়ার বিজনেস24.কম


উদাসিনতায় সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ

আজ মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস । ছাত্র জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার` এ প্রতিপাদ্য আজ পালিত হবে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪ ।নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে দিবসটি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, র‌্যালি ও সড়ক সচেতনতা কার্যক্রম। সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালিত হয়। সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়।

প্রতিদিন সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন প্রতিদিনের সংবাদ শিরোনাম। টেলিভিশনে খবর দেখলে কিংবা পত্রিকার পাতা খুললে সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেখে বিষণ্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। যান্ত্রিক যুগের মানুষ ধেয়ে চলছে যান্ত্রিক গতিতে। সেই যান্ত্রিক যানের তলায় পড়ে আবার জীবনও দিতে হচ্ছে তাকে। কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটোছুটি স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাটে, যন্ত্র দানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে সেই আবিষ্কারক মানুষকে। মানব সভ্যতায় এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্যময় চিত্র।সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকার বা চালকদের দায়িত্ব নয়, বরং দেশের সকল মানুষের দায়িত্ব। পথচারী থেকে শুরু করে সকল নাগরিকের দায়িত্ব। সবাইকে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরাপদ সড়ক উপহার দেয়া আমাদের সকলের ঈমানি দায়িত্ব।শুধু সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯২টি, এর মধ্যে নিহত ৪২৬ জন এবং আহত ৮১৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬১ জন ও শিশু ৫৩ জন। ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭৯ জন, যা মোট নিহতের ৪২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৮৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ৯৭ পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২.৭৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৪ জন, অর্থাৎ ১২.৬৭ শতাংশ। এই সময়ে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত, ৪ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৭টি রেল ট্রাক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছেন।

> যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৭৯ জন (৪২ শতাংশ), বাসের যাত্রী ২৫ জন (৫.৮৬ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২২ জন (৫.১৬ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২৪ জন (৫.৬৩ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৬৩ জন (১৪.৭৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু) ৬ জন (১.৪০ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১০ জন (২.৩৪ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

> দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি (৪১.৩২ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৪টি (৩৬.৭৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৭টি (১১.৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৪টি (৮.৬৭ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৫টি (১.২৭ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

> দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর ৮২টি (২০.৯১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৯টি (৪৩.১১ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি (২৩.৯৭ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৪১টি (১০.৪৫ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি (১.৫৩ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

> দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক, তেলবাহী লরি ও রোড রোলার ২৮.৪৮ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো ৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৫.৫০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৭.৩৭ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৫.১৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-হ্যালোবাইক) ২.৮৪ শতাংশ, বাইসাইকেল-রিকশা-রিকশাভ্যান ২.০৫ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৫৩ শতাংশ।

> দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৩২টি। এরমধ্যে বাস ৯৮টি, ট্রাক ১০৬টি, কাভার্ডভ্যান ১৮টি, পিকআপ ২১টি, ট্রাক্টর ১১টি, ট্রলি ৪টি, লরি ১০টি, ড্রাম ট্রাক ৭টি, তেলবাহী লরি ২টি, রোড রোলার ১টি, মাইক্রোবাস ১৬টি, প্রাইভেটকার ১৫টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি, পাজেরো ২টি, মোটরসাইকেল ১৭৩টি, থ্রি-হুইলার ৯৬টি (ইজিবাইক- সিএনজি- অটোরিকশা- অটোভ্যান- লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ১৮টি (নসিমন- ভটভটি- আলমসাধু- চান্দের গাড়ি- মাহিন্দ্র- হ্যালোবাইক), বাইসাইকেল-রিকশা-রিকশাভ্যান ১৩টি এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১৬টি।

> দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ:-

দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৫.১০ শতাংশ, সকালে ২৬ শতাংশ, দুপুরে ১৮.৬২ শতাংশ, বিকেলে ১৪.৭৯ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬.৬৩ শতাংশ এবং রাতে ২৮.৮২ শতাংশ।

> দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩১.৬৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৩০.০৪ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৯৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২.২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে যথাক্রমে ১২.২৪ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৪.৭৮ শতাংশ। আর বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৮২ শতাংশ, প্রাণহানি ৩.৭৫ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৮৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৪.৬৯ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৪৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.১২ শতাংশ ও প্রাণহানি ঘটেছে ৬.৩৩ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২৪টি দুর্ঘটনায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৫টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসাবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও জামালপুর জেলায়। এই ৪টি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
আর রাজধানী ঢাকায় ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন।

একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থার। মহাসড়কগুলো হচ্ছে ফোর লেন এবং জেলা ও উপজেলার রাস্তাগুলোর হচ্ছে প্রশস্তকরণ। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রাস্তাও। সব মিলিয়ে যেন নান্দনিক হয়ে উঠছে দেশের সড়ক, মহাসড়কগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলো তারপরেও কমছে না সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। রাস্তায় বের হলে মৃত্যু ভয় যেন তাড়া করছে মানুষের মনকে। আইনশৃংখলা বাহিনী রীতিমতো যুদ্ধ করেও হিমসিম খাচ্ছে সড়কে প্রাণহানী ঠেকাতে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ সংহার হচ্ছে তাদেরও অনেকের। প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃতের মিছিল। সড়ক দুর্ঘটনার নানাবিধ কারণ এবং কারণগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটির সাথে অন্যটি জড়িত। এটি যেহেতু নগর সভ্যতার ভয়াবহ চিত্র, তাই দুর্ঘটনার সাথে নাগরিক সমস্যা জড়িত। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ গাড়ি চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। তারা যখন স্টিয়ারিংটা ধরেন তখন যেন রাজা বনে যান। গতির নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকলেও তারা তা মানতে চান না। এমন কী মদ্যপ অবস্থায়ও গাড়ি চালান কেউ কেউ। ফলে জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। আবার প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালানোর জন্যও ঘটে অনেক দুর্ঘটনা। ওভার টেক করে আগে যাওয়ার প্রবণতাও সড়ক দুর্ঘটনার কম দায়ী নয়।

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়াও সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ। আইন থাকলেও কী পথচারী, কী চালক কেউই মানতে চায় না সেই আইন। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো, পার্কিং, মাঝপথ দিয়ে গাড়ি চলা, রাস্তার ধারে আড্ডা দেওয়া, রাস্তার ধারে হাট বা দোকান বসানোসহ নানাবিধ কারণে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। আবার, দেখা যায় চালকের আসনে হেলপারকেও বসতে। এমন অদক্ষ লোকও যদি গাড়ি চালায় তবে দুর্ঘটনা রুখবে কে?

এক তথ্যানুযায়ী দেশের মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ শতাংশ ঘটে থাকে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচলের কারণে। যেখানে চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। আবার লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা বিআরটিএর লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে দেখি অযোগ্য, অদক্ষ চালকদের বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে কিছু টাকার বিনিময়ে অহরহ লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। এসব লাইসেন্সধারী ব্যক্তিই সড়কে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর আমাদের সড়কে অবকাঠামোগত বেশ অগ্রগতি হয়েছে এবং তা দৃশ্যমান, কিন্তু সুশাসনের জায়গায় আমরা পিছিয়ে।’ তাই লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে সড়কে চলমান সব স্থানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমেই আমরা সড়কে মৃত্যু কমাতে পারি।

এরপর আসা যাক, ‘পরিবহন নিয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের বিষয়টিতে’। আমরা মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পাই, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ঝুঁকিপূর্ণ নসিমন-করিমন নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি; এর কারণ হিসেবে দেখি এগুলোই সড়ক দুর্ঘটনার আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো এগুলো যদি নিষিদ্ধই করা হবে, তাহলে বাজারে লাইসেন্স ঝুলিয়ে এগুলো পরিবহন বিক্রির সময় কেন সেগুলো বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয় না? যার উত্তর আমাদের কারোরই জানা নেই! কিন্তু এগুলোর বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করলে তো আর চালকরা মঙ্গলগ্রহ থেকে নিয়ে এসে তা রাস্তায় বের করতে পারবে না! প্রকৃতপক্ষে এর পেছনে দায়ী শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আবার শহরের অধিকাংশ বাস-ট্রাক, অটোরিকশাসহ সিএনজি এগুলো ভাড়ায় চালিত। মালিকরা একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে পুরো দিনের জন্য তার গাড়িটি দিয়ে দেয় চালকের কাছে। এ ক্ষেত্রে অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন, মাদকাসক্ত, অপ্রাপ্তবয়স্ক যে কারোর হাতেই গাড়িটি চলে যায়। এতে চালকের মাথায় একটি চাপ থেকেই যায়। মালিকের টাকা আয় করার পর নিজের জন্য আয় করা। এর জন্য স্বাভাবিকভাবেই গতিতে তারা বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এটার জন্যও দায়ী এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট মহল।

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা উন্নয়ন ফি, সড়ক উন্নয়ন ফি, শ্রমিক উন্নয়ন ফির নামে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য রাস্তায় একটি গাড়ি বের করলেই এসব অর্থ আয়ের বিষয়টি মাথার ওপরে চেপে থাকে চালকের। যার ফলে তারা গতিতে বেপরোয়া হয় এবং সড়কে মৃত্যুর মিছিল প্রতিনিয়ত বড় হয়, এর জন্য সড়কের অবকাঠামোর দায় থাকে না। আর দেশে অনেক ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওভারব্রিজ থাকার পরও আমরা সেটা ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হই। যদিও এমন অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে সেটি নেই কিন্তু যেটুকুই আছে তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। আমরা নাগরিকরা যদি যাত্রীছাউনিসহ নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া গাড়ি থেকে ওঠানামা না করি, যা দুর্ঘটনা ডেকে আনার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

সুতরাং আলোচ্য বিষয় তিনটির সমাধান করতে পারলেই আমরা অবকাঠামোগত যে ১০ শতাংশ মৃত্যু; যা প্রতিটি দেশেই স্বাভাবিকভাবে ঘটে থাকে তা আমরা রোধ করতে পারব বা সড়কের এই মৃত্যু আমরা সহনীয়ভাবে নিতে পারব। কিন্তু তার পরও প্রতিনিয়ত আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি হচ্ছে যানবাহনের সংখ্যাও, তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের অবকাঠামোগত যে সমস্যাগুলো চোখে পড়ছে; সেগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা প্রয়োজন। কিন্তু দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি ট্রাফিক আইন মেনে সচেতনভাবে রাস্তায় চলাচল করি।

উল্লেখ্য জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের পাশাপাশি এদিন জাহানারা কাঞ্চনের ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকীও পালন করা হবে। ২৯ বছর আগে বান্দরবানে চিত্রনায়ক স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। রেখে যান অবুঝ দুটি শিশু সন্তান জয় ও ইমাকে।

ইলিয়াস কাঞ্চন ওই সময় সিনেমার শুটিংয়ে বান্দরবান অবস্থান করছিলেন। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে দুটি অবুঝ সন্তানকে বুকে নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নেমে আসেন পথে। পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়, এ স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)।

> সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলো_ ১. ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ২. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার, ৩. অতিরিক্ত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন, ৪. ট্রাফিক আইন না মানা, ৫. সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, ৬. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতর্কতা ৭. অরক্ষিত রেললাইন, ৮. অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়া ওভারটেকিং ৯. রোড ডিভাইডার না থাকা, ১০. চালকদের অদক্ষতা ও সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকা, ১১. যাত্রীদের রাস্তা পারাপারে অসচেতনতা, ১২. যেখানে যেখানে যাত্রী ওঠানামা করা, ১৩. ভাঙা রাস্তা, ১৪. এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি চালক ও যাত্রীর অনাস্থা। এভাবে নানাবিধ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ দুর্ঘটনা থেকে জাতি পরিত্রাণ চায়।
যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয় তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন।

পরিশেষে বলতে চাই, সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে অনেকটাই কমে আসবে সড়ক দুর্ঘটনা।আর সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে পণ্যবাহী যানবাহনের সংঘর্ষে। মূলত সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান এবং মোটরসাইকেল এখন মরণদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর ও টেকসই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। আর মেনে চলতে হবে ট্রাফিক আইন, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে আইনের প্রতি, কঠোর করতে হবে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নিশ্চিত করতে হবে আইন অমান্যকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও হেলমেট পরিধান করা। বন্ধ করতে হবে মোবাইলে কথা বলা ও হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা। এছাড়া পরিহার করতে হবে প্রতিযোগিতা, ওভারটেকিং ও ফাঁকা থাকলেও মাঝপথ দিয়ে গাড়ি চালানো।প্রচার চালাতে হবে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য। কীভাবে রাস্তায় হাটতে হয় বা রাস্তা পার হতে হয় তাও অনেকে জানে না। তা জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় গাড়ি, বাইক চালাতে গিয়ে নিজেকে যেন রাজা না ভাবি। এটিও মনে রাখতে হবে বাসায় প্রিয়জনরা অপেক্ষা করছে।সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সেদিকে সকলের দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে- মনে রাখতে হবে,সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।তবেই নিরাপদ হবে সড়ক। কমবে মৃত্যুর মিছিল।তবে সরকারের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং চালক ও সাধারণ জনগনের সচেতনতার মাধ্যমে সড়কে কমবে মৃত্যুহার, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

লেখক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল, [email protected]

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: