facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

এই পাঁচ পরামর্শ থেকে কোনো শেয়ার মূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত জানুন


০১ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার, ১০:০৪  পিএম

মো. শাহীন ইকবাল

শেয়ার বিজনেস24.কম


এই পাঁচ পরামর্শ থেকে কোনো শেয়ার মূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত জানুন
মো. শাহীন ইকবাল, ব্র্যাক ব্যাংকের ট্রেজারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিভাগের প্রধান

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে যদি না জেনে, না বুঝে কেউ বিনিয়োগ করেন, তাহলে তাতে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। শেয়ারবাজারের এ ঝুঁকি টাকা হারানোর। এই ঝুঁকির বিপরীতে আছে বেশি মুনাফার সম্ভাবনাও। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বিনিয়োগের আগে জানতে হবে কিছু বিষয়ে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগে একজন বিনিয়োগকারীর কোন বিষয়গুলো জানা দরকার, সেই পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের ট্রেজারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিভাগের প্রধান এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপকদের সংগঠন সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. শাহীন ইকবাল। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান পাঁচটি পরামর্শ হলো—

১. কোম্পানির সুনাম ও সুশাসন

শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে একজন বিনিয়োগকারীকে সবার আগে দেখতে হবে ওই কোম্পানির সুনাম ও সুশাসন পরিস্থিতি। কোম্পানিটি নিয়মনীতি মেনে চলছে কি না, মানলে কী ধরনের নিয়মনীতিগুলো মানছে, তা জানতে হবে। আবার কোম্পানিটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ধরন কেমন, সেটি দেখতে হবে। কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে পেশাদারি আছে কি না, সেটা জানা খুব জরুরি। আবার মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য আলাদা আলাদা দায়দায়িত্ব নির্ধারিত আছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। আমাদের দেশে দেখি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিকেরাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে মালিকেরা যথেষ্ট শেয়ার ধারণ করছেন কিনা। এর বাইরে কোম্পানিগুলো তাদের হিসাব নিরীক্ষার জন্য কী ধরনের নিরীক্ষক নিয়োগ করছে, সেটি দেখেও কোম্পানিটির সুশাসনের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

যদি দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করানো হয়, তাহলে ওই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্বাস করা যায়। অখ্যাত বা নামডাক নেই, এমন নিরীক্ষক দিয়ে যদি কোনো কোম্পানি বছরের পর বছর নিরীক্ষক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, তাহলে ওই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে।


২. শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত না অবমূল্যায়িত

কোম্পানির সুনাম ও সুশাসন পরিস্থিতি দেখার পর বিনিয়োগের আগে দেখতে হবে, বাজারে ওই শেয়ারের দাম কত। বাজারে শেয়ারের দাম বিনিয়োগযোগ্য কি না, বিনিয়োগের আগে সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। শেয়ারের দাম বিনিয়োগযোগ্য কি না, সেটা বোঝার বা জানার জন্য অনেক পন্থা আছে। মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিওর ভিত্তিতে সহজেই বোঝা যায়, শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত নাকি অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছে। এ ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক পিই রেশিওকে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর গড় পিই রেশিও ১৫। এর মধ্যে ওই খাতের একটি কোম্পানির পিই রেশিও যদি ৩০ হয়, তাহলে সেটা হুট করে সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করা মোটেই যুক্তিসংগত হবে না। বরং খুঁজে দেখতে হবে পিইও বেশি হওয়ার কারণ।

কোনো কোম্পানির একটি প্রান্তিকে আয় দেখে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ৩ থেকে ৫ বছরের আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। এ ছাড়া দেখতে হবে কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ওই কোম্পানির এনএভির (প্রকৃত সম্পদমূল্য) তুলনায় কত গুণ বেশি। মনে রাখতে হবে, এনএভির তুলনায় যে শেয়ারের দাম যত বেশি হবে, সেই শেয়ারে ঝুঁকিও তত বেশি। এর বাইরে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির কয়েক বছরের গড় বাজারমূল্যও দেখা উচিত।

৩. আয় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা

একটি কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য অনেকটাই নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ আয় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর। যদি একটি কোম্পানির আয়ে চলতি বছর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় এবং ভবিষ্যতেও এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ওই কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্যের ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যৌক্তিক। অন্যদিকে একটি কোম্পানির বার্ষিক আয় ৫ শতাংশ বাড়লে ওই কোম্পানির বাজারমূল্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া যৌক্তিক নয়। অন্যদিকে এককালীন মুনাফা বা কোনো এক প্রান্তিকের মুনাফার প্রবৃদ্ধির কারণে শেয়ারের বাজারমূল্যে বড় পরিবর্তন হওয়াটাও যথাযথ না। কারণ, এক প্রান্তিক বা এককালীন মুনাফা বা আয় স্থায়ী না। এ ছাড়া কোম্পানির ভবিষ্যৎ আয় প্রবৃদ্ধি নিরূপণ করার জন্য ওই কোম্পানির অতীতের কয়েক বছরের আয় প্রবৃদ্ধির তথ্যও যাচাই–বাছাই করে দেখতে হবে।

৪. বিনিয়োগ থেকে মুনাফার সম্ভাবনা

আপনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, বিনিয়োগ করার আগে সেই কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। এ জন্য ডিভিডেন্ড ইল্ডও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। ধরা যাক, আপনি বাজার থেকে কোনো কোম্পানির শেয়ার ২০ টাকায় কিনেছেন। ওই কোম্পানি বছর শেষে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিল। তাহলে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড ইল্ড দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। এখন যদি দেখা যায়, বাজারের অন্য সুদহারের চেয়ে ওই কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ড বেশি, তাহলে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা লাভজনক। এর বাইরে মূলধনি মুনাফার সম্ভাবনাও রয়েছে।

৫. ব্যবসা টেকসই কি না

আপনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, বিনিয়োগের আগে সেই কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কে জানাটা খুবই জরুরি। শুধু ব্যবসা সম্পর্কে জেনে থেমে থাকলেই চলবে না। জানতে হবে ওই ব্যবসা কতটা টেকসই, ব্যবসা সম্প্রসারণের সক্ষমতা কেমন। প্রতিযোগীদের তুলনায় বাজারে অবস্থান কেমন, তা–ও জানতে হবে। দেখা গেল, এমন এক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, যে কোম্পানির ব্যবসার ভবিষ্যৎ ভালো নয়। তাহলে ওই কোম্পানি থেকে আপনার মুনাফা করা কঠিন হবে। যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, সেই কোম্পানি ব্যবসায় আগামী পাঁচ–সাত বছর টিকবে কি না, সেটি যাচাই করে দেখা জরুরি।তবে মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে দীর্ঘ সময় বিনিয়োগ ধরে রাখার ইচ্ছে থাকতে হবে। বিনিয়োগ করার পর থেকেই মুনাফার চিন্তা করলে হবে না। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ও পরে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো সম্পদ কিনতে হবে কম দামে, বিক্রি করতে হবে বেশি দামে। শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।-সূত্র : প্রথম আলো।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ার বিজনেস কী? -এর সর্বশেষ