১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার, ১১:১৪ এএম
স্টাফ রিপোর্টার
শেয়ার বিজনেস24.কম
বাংলাদেশ চা বোর্ড অবৈধ ভেজাল, নিলামবহির্ভূত এবং পচা চায়ের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করে। গত প্রায় এক মাস ধরে চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ে অভিযান পরিচালিত হয়। গত এক মাস ধরেই চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে ব্যাপক সুফল এসেছে। এসব অভিযানের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে চা নিলামে। এবার ৪ দশমিক ০৪ মিলিয়ন কেজি চা নিলামে উঠেছে, যা নিলামের ইতিহাসে রেকর্ড।
চা বোর্ডের লাইসেন্স ছাড়া চা বিক্রি রোধ করার বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে কঠোরভাবে। তবে অবৈধভাবে আসা চায়ের বিষয়ে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি এ কারণে দেশের রাজস্বও আদায় হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে চা আইন-২০১৬ প্রতিপালনে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ রুহুল আমীনসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতি সোমবার চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত সোমবার সর্বোচ্চ পরিমাণ চা নিলামে বিক্রি হয়, ৪ দশমিক ০৪ মিলিয়ন কেজি। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার নিলাম হয় ৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন কেজি, গত ২৮ আগস্ট নিলাম হয় ৩ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন কেজি, গত ২১ আগস্ট নিলাম হয় ৩ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন কেজি ও গত ১৪ আগস্ট নিলাম হয় ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন কেজি। প্রতি সোমবার চা’র নিলাম হয়।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, চা আইন-২০১৬ প্রতিপালনকে সামনে রেখে গত এক মাস ধরেই চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়। অভিযানে নিলামবহির্ভূতভাবে চা বিক্রি বন্ধ করা, ভেজাল চা বিক্রি রোধ, মেয়াদোত্তীর্ণ পচা চা বিক্রি বন্ধ করা, সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের অনুমতি ছাড়া চা বাজারজাতকরণ বন্ধ করা, চা বোর্ডের লাইসেন্স ছাড়া চা বিক্রি রোধ করার বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে। চা আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মাঠপর্যায়ে দেখা যায় সব দিকে ভেজাল, পচা, নিলামবহির্ভূত এবং নষ্ট চা বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি এ কারণে দেশের রাজস্বও আদায় হচ্ছে না।
টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. মঈনুদ্দিন বলেন, অভিযানের বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এখানে প্রকৃত চা ব্যবসায়ীদের বা দামিদামি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি নামে গিয়ে আরও কম দামে চা বিক্রয় হচ্ছে। তা ছাড়া বাগান থেকে চোরাইপথে চা চলে যাচ্ছে। এই অভিযানের কারণে অনেক ধরনের সুফল সাধারণ ক্রেতারাও যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত ২১ আগস্ট থেকে চা বোর্ড অভিযান শুরু করে। অভিযানে নকল-ভেজাল, পচা, নিলামবহির্ভূত ও অবৈধ চা বিক্রির অভিযোগে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা, ৪ হাজার ৫০০ কেজি পচা-দুর্গন্ধ যুক্ত চা জব্দ, নিলামবহির্ভূত-অবৈধ ৩০০ বস্তা (১৫ হাজার কেজি) চা জব্দ, ১০টি মামলা দায়ের এবং অনুমোদনহীন ৭০টি চা’র ব্র্যান্ডের প্যাকেট জব্দ করা হয়।
এর মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর নগরের বহদ্দারহাট এলাকার এস এস ট্রেডিং প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে বিএসটিআই লাইসেন্স না থাকা, অবৈধ ট্রেডমার্ক ব্যবহার, চা বোর্ডের লাইসেন্স না থাকা, পঞ্চগড় থেকে চা ক্রয়ের প্রমাণপত্র না পাওয়ায় ২১ বস্তা চা এবং ১২০০ প্যাকেটে প্রায় ১৭০০ কেজি অবৈধ চা জব্দ করা হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরের নগরের জেল রোডসংলগ্ন পিবি সুপার মার্কেটে চায়ের প্যাকেট প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী মেসার্স আইনান এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে ৪০ ধরনের নকল ব্র্যান্ডের প্রায় ৫০ হাজার প্যাকেট চা পাতা জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া অনুমোদনবিহীন নকল চা ব্র্যান্ডের আকর্ষণীয় প্যাকেটে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার এবং বিএসটিআইএর লোগো ব্যবহার করার প্রমাণ পায় আদালত। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে শহরের চাক্তাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে চা ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স না থাকা, অনুমোদনহীন চা ব্র্যান্ড ও নকল প্যাকেট ব্যবহার এবং চা ক্রয়ের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় নিজাম টি হাউজকে ৫০ হাজার টাকা, চট্টলা টি হাউজকে ২০ হাজার টাকা ও আবুল কাশেম নামে এক ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ২২ ধরনের অবৈধ ব্র্যান্ডের চা প্যাকেটও জব্দ করা হয়।
তা ছাড়া গত ২৮ আগস্ট নগরের হালিশহর এলাকার রাজধানী ফুড প্রডাক্টকে চা ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স না থাকা, নিলামবহির্ভূত চা ক্রয়, অবৈধ ট্রেড মার্ক ব্যবহার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্যাকেটজাতের অপরাধে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নিলাম বহির্ভূতভাবে ক্রয়কৃত ১০ হাজার কেজি (২০০ বস্তা) চা ট্রাক থেকে আনলোড করার সময় হাতেনাতে জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে তিনটা ব্রান্ডের নামে ১৪ ধরনের প্যাকেটে প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে চা বাজারজাত করার প্রমাণ পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।