১১ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার, ০২:১৫ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ওষুধ রপ্তানি বাড়লেও গত ফেব্রুয়ারিতে তা কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে—চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৪৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১৩৫ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় তা সাত দশমিক এক শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন—যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য দুই মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১৬ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ছয় শতাংশ কম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়া এবং ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় ওষুধ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে ওষুধ রপ্তানি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, `মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানি বেড়েছে।`
ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, `এক মাস থেকে আরেক মাসে রপ্তানি কমবেশি হওয়া সাধারণ বিষয়। রপ্তানি আদেশের সময়ের ওপরও তা নির্ভর করে।`
`অনেকের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। তাই এই ধরনের ওঠানামা আমাদের রপ্তানিতে প্রভাব ফেলে না।`
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, `স্কয়ার ফার্মা পেমেন্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে ঋণের ওপর রপ্তানি আদেশ নেয় না।`
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী নওয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, `রপ্তানি আদেশ স্থিতিশীল আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সরাসরি সরবরাহও চলমান আছে।`
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে রপ্তানি আদেশ পেয়েছে। এর রপ্তানি আদেশ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এটি রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
`রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে` বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের বিকন মেডিকেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, `ইপিবির তথ্যে সম্প্রতি রপ্তানিতে ধীরগতি দেখা গেলেও আসলে ওষুধ রপ্তানি বাড়ছে।`
তার ভাষ্য, সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি কমে যায়। কারণ এই সময়ে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় রপ্তানি কমে যায়।
`এই সাময়িক মন্দার মধ্যে ফেব্রুয়ারির রপ্তানির হিসাব থাকে,` বলে জানান তিনি।
ইপিবির তথ্য অনুসারে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে ওষুধ রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ছয় শতাংশ।
মঞ্জুরুল আলম আশা করছেন—ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় রপ্তানি আবার শুরু হওয়ায় এপ্রিলে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে। তার মতে, রপ্তানির এক-দুই মাস নেতিবাচক থাকলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
ওষুধ রপ্তানির হিসাবটা বড় না হলেও দেশের ভাবমূর্তি ও ওষুধ শিল্পের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ।
রেনাটা লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজার অনন্ত সাহা একমত পোষণ করে বলেন, `রপ্তানি আদেশ স্থিতিশীল আছে। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যতটা আশা করা হয়েছিল, ততটা হয়নি।`
রপ্তানিতে ধীরগতি সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে রেনাটার দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। কারণ মার্কিন সহায়তা কমে যাওয়ার প্রভাব সরাসরি প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে।
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক আরেফিন আহমেদ বলেন, `সম্প্রতি ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিল হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ইউএসএআইডি কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নিয়মিতভাবে বিপুল পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করি। হঠাৎ করে তহবিল বাতিল হওয়ায় ভ্যাকসিনের দুটি বড় রপ্তানি চালান বাতিল হয়েছে।`
বাতিল হওয়া রপ্তানি চালানে দুই মিলিয়ন ডলারের দুই মিলিয়ন ইনজেকশন ডোজ ছিল।
আরেফিন আহমেদ আরও বলেন, `যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের পর বাংলাদেশের ইনসেপটা ইউএসএআইডির বিশ্বস্ত গ্রাহক। অপ্রত্যাশিতভাবে রপ্তানি বাতিলের ফলে আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ফলে রাজস্ব কমেছে। জরুরি ওষুধ সরবরাহে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিশ্রুতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।`
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।