১৯ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার, ০৪:৩১ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
যতো টাকাই থাকুক না কেন পুঁজিবাজারে একসঙ্গে ১৫টির বেশি শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত নয় বলে মনে করেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান।
এক সাক্ষাৎকারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এমরান বলেন, “পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিনিয়োগের বণ্টন। ধরুন, কারো ১০ লাখ টাকা থাকলে তার সর্বোচ্চ পাঁচটি শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত।
“কারো যদি এককোটি টাকার মত থাকে তাহলে তার ১০টির মতো শেয়ারে বিনিয়োগ থাকতে পারে। এর চেয়েও বেশি টাকা থাকলেও কোনোভাবেই ১৫টির বেশি শেয়ারে বিনিয়োগ থাকা উচিত না।”
একজন দক্ষ বিনিয়োগকারী বা সম্পদ ব্যবস্থাপকও ৮টি বা ১০টির বেশি শেয়ারের বিষয়ে ঠিকভাবে নজর রাখতে পারেন না বলে তার মত।
“একজন বিনিয়োগকারীকে এমন সংখ্যক শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে তিনি শেয়ারগুলোর দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে কখন কমছে বাড়ছে- এসব খেয়াল রাখতে পারেন।”
পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি বোঝার জন্য জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয়, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ও আমানতের সুদের হারের মতো অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করার উপর জোর দেন এমরান।
তবে পুঁজিবাজারের জন্য সুদের হারের উপর নজর রাখাকে সবচেয়ে জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুদের হার বেশি থাকলে পুঁজিবাজার ভাল করতে পারে না।
“প্রতিটি কোম্পানি কমবেশি ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়লে মুনাফা থেকেই তা পরিশোধ করতে হয়। মুনাফা কমে গেলে ব্যবসা বাড়ে না। তখন কোম্পানির শেয়ারে দাম কমে যায়।
“একইভাবে আমানতের সুদের হার বাড়লে মানুষ পুঁজিবাজারে থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়। কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকের এফডিআরএ বিনিয়োগ করে অথবা সঞ্চয়পত্র কেনে। তখন বিক্রি বেড়ে গিয়ে শেয়ারের দাম কমে যায়।”
পুঁজিবাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে লোকসান হতেই পারে। তখন নির্দিষ্ট শেয়ারের দাম কমার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে কি না তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন এমরান।
তিনি বলেন, শেয়ারে দাম কমে যেতে থাকলে অথবা অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব লোকসান নিয়ে নেওয়া উত্তম।
“ধরুন কেউ একটি শেয়ার কিনেছিল ১০০ টাকা দিয়ে, ৩ মাস পরে শেয়ারটির দাম হল ৯৫ টাকা । যদি বিনিয়োগকারী বুঝতে পারেন, শেয়ারটির দাম কমার পেছনে সঠিক কারণ আছে। তখন বিনিয়োগকারীর উচিত হবে শেয়ারটি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ভাল শেয়ার কেনা।
“কিন্তু বিনিয়োগকারী এই কাজটি না করে লোকসানের শেয়ারটি রেখে দিলেন। বছর শেষে দেখা গেল শেয়ারটির দাম কমে ৮০ টাকা হয়ে গেল । তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকসান নিয়ে নেওয়াও ভাল সিদ্ধান্ত।”
কোনো শেয়ারের দাম কমে গেলে শেয়ারের গড় দাম কমিয়ে আনতে বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় নির্বিচারে শেয়ার কিনতে থাকেন। এই প্রবণতা থেকে নিরুৎসাহিত করেন এমরান।
“এক্ষেত্রে খুঁজে দেখতে হবে আসলে শেয়ারটির দাম কমার কোন কারণ আছে কি না। যদি থাকে তাহলে সেই শেয়ার আর কেনা উচিত না। কিন্তু যদি দেখা যায় শেয়ারটির দাম কোনো কারণ ছাড়া কমছে, তখন কম দামে শেয়ারটি আরও কেনা যেতে পারে।”
ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ব্যবসায় লোকসান করার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে ভাল ‘ফান্ড ম্যানেজারদের’ লেখা বই পড়ে বিনিয়োগের বিষয়গুলো জানার উপর জোর দেন এমরান।
“অন্ততপক্ষে ভাল দুইটা বা তিনটা ফান্ড ম্যানেজারের লেখা বই পড়া উচিত। তাহলে লোকসান করার সম্ভাবনা কম থাকে।”
বুয়েটে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক এমরান হাসান মেঘনা বাংলাদেশ লিমিটেড দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
পুঁজিবাজার, তহবিল ব্যবস্থাপনা, মিউচুয়াল ফান্ড ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় তার এক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।