facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪

Walton

"কুমিরের পিঠে গড়ে ওঠা পূর্ব তিমুর: মিথ, সমুদ্র আর মানুষের গল্প"


১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার, ০১:৫৮  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


 

সে এক সময়ের কথা:


সাগরে ডুবে যাচ্ছিল এক ছোট্ট ছেলে। এক কুমির তাকে পিঠে তুলে বাঁচায়। তারপর কুমিরটি ছেলেকে পিঠে নিয়ে সাগর থেকে সাগর ঘুরে বেড়ায় বছরের পর বছর। শেষে কুমিরটি বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং পূর্ব তিমুরের এক জায়গায় মারা যায়। ছেলেটি তখন ভূমিতে নামে, সে-ও হয়ে উঠেছে পূর্ণ মানুষ। আর সেই থেকে পূর্ব তিমুরে শুরু হয় মানুষের বসবাস।

এই উপকথার কারণেই কুমির পূর্ব তিমুরে সবচেয়ে শ্রদ্ধার প্রাণী। তিমুরি ভাষায় কুমিরকে বলা হয় ‘আবো’, যার অর্থ পূর্বপুরুষ।


সাগর-নীল স্বপ্ন: পূর্ব তিমুরের সৌন্দর্য

পূর্ব তিমুরে পৌঁছে যেন রূপকথার দেশে ঢুকে পড়া। রাজধানী দিলির সাগরপারে ইউনিসেফের আরিফা শারমিনের বাংলো থেকে দেখা যায় স্বচ্ছ নীল জলরাশি। সমুদ্রের রংও যেন পাল্টে যায়—গাঢ় নীল, আকাশ নীল, বেগুনি আর খয়েরি। সৈকতে ছড়িয়ে থাকা সাদা নুড়ি আর কালো ধূসর পাথর যেন এক শিল্পীর আঁকা বাটিক চাদর।

ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে বালি, তারপর ছোট এক বিমানযাত্রায় দিলি। জনসংখ্যা মাত্র ১২ লাখ! নেই যানজট, নেই উঁচু দালান।


মানুষের গল্প, ভাষা আর সংস্কৃতি

পূর্ব তিমুরে স্থানীয় ভাষা তেতুন আর মুদ্রা মার্কিন ডলার হলেও তিমুরি মুদ্রার কিছু ভাংতি পাওয়া যায়। এখানে "মানা" বলতে বোঝায় বোন। আমাদেরও তিন দিনের সফরে বন্ধুত্ব জমে ওঠে এই "মানা" ডাক দিয়েই।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা এই দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট সেই সংগ্রামের ছাপ। ধনী-গরিবের ব্যবধান থাকলেও দেশ গড়ার স্বপ্নে একসঙ্গে এগিয়ে চলছেন তারা।


যিশুর ভাস্কর্য আর অপরূপ সূর্যাস্ত

সমুদ্রের ধারে পাহাড়ের চূড়ায় দুই হাত প্রসারিত যিশুর ভাস্কর্য যেন আশীর্বাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যায় সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি অমলিন। তারুণ্যের দল সংগীতের তালে নাচে, আর আলো-আঁধারের খেলা ভাস্কর্যটিকে স্বপ্নিল করে তোলে।


তিমুরি কফি ও বাংলাদেশিদের অতিথিপরায়ণতা

ইন্দোনেশিয়ার কফির সুনাম শোনা থাকলেও তিমুরের কফি নতুন চমক। আরিফার বাড়িতে বাংলাদেশি মৌসুমি-নোমান দম্পতির আপ্যায়ন সেই কফির স্বাদ আরও গভীর করে। এখানে বাংলাদেশিদের একতা আমাদের মনে করায় শিকড়ের টান।


রোনালদো, ফুটবল আর তিমুরি বন্ধুত্ব

গাড়িচালক জেলারডোকে আমরা ডাকতাম "রোনালদো"। কারণ? ফুটবল-প্রেমী তিমুরবাসী কোনো কিছুতেই বিরক্ত হন না। সাগরের ধারে বসে মাছ ভাজা খাওয়া হোক বা তিমুরি হস্তশিল্পের দোকান ঘোরা—সবখানে ফুটে ওঠে এই দেশের মাটি আর মানুষের গল্প।


কবিতায় ফিরে আসে কুমির

পূর্ব তিমুরের প্রথম প্রেসিডেন্ট জানানা গুসমাওয়ের লড়াই আর কবিতায় বারবার ফিরে আসে সেই শ্রদ্ধার কুমির। আমাদের শামসুর রাহমানের অনুবাদে সেই কবিতার লাইনেই যেন ধরা পড়ে পূর্ব তিমুরের আত্মার ছবি:

"সমুদ্রের গভীরতা থেকে কুমির
ভেসে উঠল
তার তরঙ্গিত চর্ম রূপান্তরিত হলো পর্বতমালায়—
যেখানে মানুষ বংশানুক্রমে জন্মগ্রহণ আর মৃত্যুবরণ করে।"


তিমুরে বন্ধুত্ব, স্মৃতি আর ভালোবাসা

পাহাড়ে বাঁশ-কাঠের আধুনিক রেস্তোরাঁ ‘টিবার’-এ বন্ধুদের নিয়ে সেই নিস্তব্ধ রাতের গল্প, নীল সমুদ্রের গর্জন আর পাহাড়ের গাম্ভীর্যই যেন স্মৃতির দেরাজে রেখে গেলো তিমুরের মায়াবী ছোঁয়া।


"অবরিগাদা, পূর্ব তিমুর!"

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

ভ্রমণ -এর সর্বশেষ