০৬ জুন ২০২৩ মঙ্গলবার, ০৫:১৩ পিএম
স্বাস্থ্য ডেস্ক
শেয়ার বিজনেস24.কম
প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এই তাপমাত্রায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বৃদ্ধরা, তবে এটা যেকোনো মানুষের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। তাই কিছু বিষয়ে সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
১. প্রচুর পানি পান করুন। তৃষ্ণাবোধ না করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানি পান করুন। সব সময় সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখুন। ঘরে বিদ্যমান তাপমাত্রায় থাকা পানি ধীরে ধীরে পান করুন। ঠান্ডা পানি ও বরফপানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এই সময়ে খুব বেশি ঠান্ডা পানি খেলে মানবদেহের ছোট রক্তনালিগুলো ফেটে যেতে পারে।
২. যদি বাইরে থাকার সময় হাত-পা রোদের সংস্পর্শে থাকে, তাহলে বাসায় ফিরেই তড়িঘড়ি হাত-পা ধোবেন না। এ ক্ষেত্রে গোসল বা হাত-পা ধোয়ার আগে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
৩. এই সময়ে যতটা সম্ভব বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বিশেষ করে বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। শিশুদের এ সময় বাইরে খেলাধুলা বা দৌড়ঝাঁপ করতে দেওয়া যাবে না। বাইরে বের হলে বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না। পেশাগত কারণে রাস্তায় রোদে যাঁদের থাকতেই হবে, তাঁরা কিছু সময় অন্তর ছায়া বা ঠান্ডায় বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. বাইরে বের হতে হলে ছাতা, টুপি সঙ্গে রাখুন। পা ঢাকা জুতা ও হালকা, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। আঁটসাঁট বা সিনথেটিক কিছু পরবেন না। সানগ্লাস ও সানব্লক ব্যবহার করুন।
৫. শরীরে অস্বস্তি হলে ওরস্যালাইনে পান করতে পারেন। বাড়িতে শরবত, ফলের রস, লেবুপানি, লাচ্ছি বানিয়েও পান করতে পারেন। প্রচুর ফলমূল খান যাতে পানির পরিমাণ বেশি। এভাবে শরীরকে সব সময় হাইড্রেটেড রাখতে হবে।
৬. প্রচণ্ড গরম থেকে এসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঢোকার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আবার এসি থেকে বেরিয়েও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। শরীরকে স্বাভাবিক তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে।
৭. হিটস্ট্রোক ও হিট ক্র্যাম্প (গরমের কারণে পেশিতে টান) এড়াতে শরীর ঠান্ডা রাখতে হবে। খুব গরম লাগলে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিন। পারলে ঠান্ডা পানিতে গা স্পঞ্জ করে নিন।
৮. প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করুন।
৯. বাতাস শুষ্ক ও গরম থাকলে দিনের বেলা জানালা বন্ধ রেখে বিকেলে খুলে দিতে পারেন। এতে করে ঘরের ভেতর ঠান্ডা থাকবে। ঘরের জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করলে বাইরের রোদ তাতিয়ে তুলবে না।
১০. বাড়ির আঙিনায়, বারান্দায় অথবা ছাদে গাছ লাগান। পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে সবুজ পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
হিটস্ট্রোক
প্রচণ্ড দাবদাহে হঠাৎ করে কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, একে বলে হিটস্ট্রোক।
কীভাবে বুঝবেন? প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব, মাথা ঝিমঝিম, মাথাব্যথা, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের মাংসপেশিতে অস্বস্তি, বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি হতে থাকে। তারপর এক সময় রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।
কী করবেন?
১. দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা বা শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
২. শরীরের অতিরিক্ত কাপড়চোপড় সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩. প্রচুর পানি, ফলের জুস অথবা শরবত, খাবার স্যালাইন পান করতে হবে।
৪. সমস্ত শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
৫. শরীর ঠান্ডা করতে কুলিং ফ্যান ব্যবহার করতে হবে।
৬. বগলের নিচে আইস প্যাক কাপড়ে জড়িয়ে দিয়ে রাখা যায়।
৭. রোগী অচেতন হলে মুখে পানি জোর করে দেওয়ার চেষ্টা না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডা. ইয়াসমিন আক্তার: কনসালট্যান্ট, মেডিসিন, আলোক হেলথ কেয়ার অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।